করোনার সংক্রমণ রোধে দেশে চলছে সাত দিনের কঠোর লকডাউন। লকডাউনে দোকান-মার্কেট বন্ধ থাকলেও কৌশলে চলছে বেচাকেনা। নানান অজুহাতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকেই লকডাউন মানছেন না।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ গার্লস স্কুল এলাকার শাহী জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, নুরী হার্ডওয়ার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে অস্থির চোখে এদিক–সেদিক নজর রাখছে এক কিশোর। কাছে যেতেই বোঝা গেল আসল ঘটনা। শাটারের ফাঁকা দিয়ে দোকানের ভেতরে চলছে কৌশলে বেচাকেনা। বাইরে অবস্থান করছে ক্রেতা আর ভেতরে দোকানের মালিক। তিনিই গোপনে ক্রেতাদের পণ্য এনে দিচ্ছেন। কর্মচারী কিশোর রয়েছে পাহারাদারের ভূমিকায়।
দোকানের মালিক বলেন, `সংসার চালানোর জন্য কিছু উপার্জনের ব্যবস্থা করতেই লকডাউনে দোকান খোলা রাখতে বাধ্য হয়েছি। গত দুইদিন ধরে দোকানের সামনে কর্মচারীকে পাহারায় রেখে বেচাকেনা করছি।'
পাহারাদারের ভূমিকায় থাকা সেই কিশোর বলেন, `আতঙ্কে থাকি, কখন প্রশাসনের লোকজন আসে, কখন দৌড়ে পালাতে হয়।'
নগরীর মির্জাপুলের শুলকবহর রোডে পেটের দায়ে লকডাউন উপেক্ষা করে টংদোকান খোলেন জলিল মিয়া। জানতে চাইলে জলিল মিয়া বলেন, দোকান চালু রাখতে পারলেই বাসায় সবাই পেট ভরে কিছু খেতে পারে। এই বিকেল সময়টা একটু নিরাপদ। এখন এদিকে পুলিশ আসার কথা না। তাই এই সুযোগে কিছু টাকা কামিয়ে নিচ্ছি।
নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির নিচে দল বেঁধে হাঁটছে শিশুরা। তাঁরা সাইকেল চালাচ্ছে। কেউবা মেতেছে আড্ডায়।
রাস্তায় হাঁটতে বের হওয়া এক গৃহিণী বলেন, `আমরা তো মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বের হয়েছি। তাও মাত্র দশ মিনিটের জন্য। অন্য সময় আমরা নিয়মিত এক ঘণ্টা করে হাঁটি।'
কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতে মির্জাপুলের সড়কে দেখা যায় দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন একদল যুবক। তাঁদের জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, `সারা দিন বের হইনি। তাই একটু হাঁটতে বেরিয়েছি। পুলিশ আসার আগেই সরে পড়ব।'
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিধিনিষেধ না মানার বিষয়ে নগরীর চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর মাহমুদ বলেন, `এভাবে দোকান খোলা রেখে নয়তো লুকোচুরি করে ব্যবসা চালানোর খবর পেয়ে প্রথমে আমরা সাবধান করছি। পরে এর পুনরাবৃত্তি হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।'
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাইমা ইসলাম বলেন, `আমরা গলিগুলোতেও অভিযান জোরদার করেছি। গোপনে যাঁরা দোকান খোলা রাখছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনছি। শুক্রবারের অভিযানে এমন ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা।'