মাত্র ১৪ দিন আগেই পৃথিবীর আলো দেখেছে ঝর্ণা। এমন সময় মায়ের নিরাপদ কোল ও বাবার নিখাদ আদরেই হেসে খেলে তার সময় কাটানোর কথা। তাকে ঘিরে পরিবার আর স্বজনদের নানা খুনসুটিতো থাকতই। অথচ বিধি বাম। যেই বাবা-মায়ের পরম যত্ন আর আশ্রয়ে বেড়ে ওঠার কথা, তারাই তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে।
এমন নিষ্ঠুর আর অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রোববার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ধারণা, নবজাতকটির হাত ও পায়ের কিছু ত্রুটি থাকার কারণেই তাকে ফেলে রেখে গেছে জন্মদাতা বাবা-মা।
বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ শাহিন সুলতানা। তিনি জানান, রোববার জরুরি বিভাগ থেকে টিকিট কেটে ওয়ার্ডে শিশুটিকে নিয়ে আসে তার বাবা-মা। কিছুক্ষণ পর তাঁরা নার্সদের কাছে তাঁকে তুলে দিয়ে পালিয়ে যান দুজনেই। পরে তাঁদের দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
হাসপাতালের নিবন্ধন খাতায় শিশুটির বাবার পরিচয় লেখা ছিল জসিমউদ্দিন। ঠিকানায় দেওয়া ছিল খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি।
শাহিন সুলতানা বলেন, শারীরিকভাবে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছে মেয়ে নবজাতকটি। তবে হাত ও পায়ের কিছু ত্রুটি নিয়ে জন্মেছে সে। তার দুই হাতের বেশ কয়েকটি আঙুল জোড়া লাগানো আর দুই পা কিছুটা বাঁকানো। সম্ভবত এসব কারণেই তাকে ফেলে রেখে নিতে পারেন তার বাবা-মা। এমন ঘটনা আগেও আমরা দেখেছি। অথচ সার্জারি করলেই শিশুদের এমন শারীরিক জটিলতা দূর করা সম্ভব।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিশুটির দুধ ও খাবারের চাহিদা যাতে পূরণ হয় সেটির দায়িত্ব আমরা পুরোপুরি নিয়েছি। তা ছাড়া তার জামা-কাপড়, চিকিৎসা ও ওষুধ খরচের সম্পূর্ণ দায়ভারও আমাদের। আমরা চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তারা যদি তাকে রিলিজ দেয় তবে নগরের রউফাবাদের সমাজসেবা অধিদপ্তরের ছোটমণি নিবাসেই তাকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ূন কবির বলেন, নবজাতকের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। আসলে এখানে এমন ঘটনা অনেক ঘটে থাকে। শিশুটি যাতে নিরাপদ একটি আশ্রয় পায় সেটি আমাদের বিবেচনায় আছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।