চট্টগ্রাম নগরীতে ২০১৭ সাল থেকে সাত বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৬২ জন নিহত হয়েছে, যা আগের একই সময় ব্যবধানের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। এই সাত বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির অর্ধেকেই ছিলেন পথচারী। আজ বুধবার নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনসের সম্মেলনকক্ষে একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশিত চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট-২০২৫-এ এমন তথ্য উঠে এসেছে।
২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) যৌথভাবে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) কর্মসূচির আওতায় প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সংস্থা ভাইটাল স্ট্যাটেজিস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাণহানির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এটি প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিল পথচারীরা। এই সাত বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬৩ জন পথচারী নিহত হয়েছে। পথচারীদের পর সবচেয়ে ঝুঁকিতে ছিল দুই ও তিন চাকার যানবাহনের যাত্রী ও চালকেরা। এসব যানবাহনের দুর্ঘটনায় ১৯৫ জন নিহত হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম নগরীতে ২০টি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বড়পোল মোড়, অলংকার মোড়, সিইপিজেড গেট, সিটি গেট, নিউমার্কেট বাসস্টপ, কালামিয়া বাজার বাসস্টপ এবং সাগরিকা গোলচত্বর। দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে স্থানগুলোর ত্রুটি চিহ্নিত করে পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে মতামত দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্যভিত্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শহরের সড়কে প্রাণহানি প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশেষ করে পথচারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুটপাত প্রশস্তকরণ, উঁচু জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাত নিশ্চিতকরণ, স্পিড হাম্প স্থাপন এবং পথচারী দ্বীপ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি দুর্ঘটনা কমাতে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা-২০২৪ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সড়ক নিরাপত্তা শুধু আইন প্রয়োগের বিষয় নয়, এটি নগরপরিকল্পনা ও সড়ক নকশার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিএমপি রোড সেফটি সেল গঠন এবং রোড ক্র্যাশের তথ্য সংগ্রহে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, যা সড়ক নিরাপত্তায় গতি আনছে।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল বলেন, প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে সিএমপির সঙ্গে যৌথভাবে চট্টগ্রাম শহরের সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে চসিক।
বিআইজিআরএস চট্টগ্রামের ইনিশিয়েটিভ কো-অর্ডিনেটর লাবিব তাজওয়ানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী। প্রতিবেদনের মূল তথ্য উপস্থাপন করেন বিআইজিআরএস চট্টগ্রামের সার্ভেইল্যান্স কো-অর্ডিনেটর কাজী সাইফুন নেওয়াজ। উপস্থিত ছিলেন বিআইজিআরএস এনফোর্সমেন্ট কো-অর্ডিনেটর কাজী হেলাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, একাডেমিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।