কক্সবাজার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালের পাশের হাসিনা গ্রাম। এ গ্রামের পূর্বে পাশে বেয়ে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক।
সবুজ গাছগাছালির এই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী সুরেশ চন্দ্র পরলোক গমন করেন ১০ দিন আগে। আজ মঙ্গলবার তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে মাথা মোড়ানোর জন্য যান তাঁর সন্তানেরা। এই কর্ম পালন করার জন্যে তাঁর নয় সন্তান মহাসড়কের পূর্ব পাশের বনে গিয়েছিলেন। মহাসড়কের পাশেই তাঁরা কর্ম শেষে বাড়ি ফেরার জন্যে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
এরপর মাথা মোড়ানো শেষে তাঁদের বাবার শ্মশানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাবার শ্মশানে আর প্রার্থণা করতে নয়, বরং নিজেরাই লাশ হয়ে শ্মশানে যাচ্ছেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার ভোর সাড় ৫টায় কক্সবাজারমুখী একটি পিকআপ মুল সড়ক থেকে নেমে গিয়ে তাঁদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চার ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আহত হন আরও দুই ভাই ও একবোন। অল্পের জন্যে প্রাণে রক্ষা পান প্লাবন (১৯) ও মুন্নী (২৮)।
বিকেল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বরণ ও মারা যান। এ নিয়ে একই পরিবারের মোট পাঁচজন মারা গেলেন।
এর আগে সকালে ঘটনাস্থলেই নিহতরা হলেন, অনুপম (৪৬), দীপক (৩৫), চম্পক (৩০) ও নিরুপম (৪০)।
বেলা ১২টা সুরেশ ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে চার ভাইয়ের নিথরদেহ। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। তাঁদের স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই কারও কাছে।
প্রত্যক্ষদর্শী প্লাবন ঘটনার পর থেকে পাগলপ্রায়। তিনি এবার ডুলাহাজারা কলেজ এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। চার-পাঁচজন স্বজন ও বন্ধু তাঁকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তিনি অপরিচিত যাকে সামনে পাচ্ছেন তাঁর দিকেই তেড়ে আসছেন! পুলিশ, সাংবাদিক ও রাজনীতিক সবাইকে এ দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী করছেন। এই প্রতিবেদক তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বলেন, এখন লিখে হবে? এটি খুন। চলে যান এখান থেকে! তাঁর পাশেই নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মা মানু রানী (৬৫)।
সুজন স্থানীয় একজন জানান, একসঙ্গে এক পরিবারের এত লাশ তাঁরা আর কোনো দিন দেখেননি।
চকরিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক-টিআইবি) সদস্য ও সঙ্গীত নিকেতনের অধ্যক্ষ সন্তোষ কুমার আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাঁরা আজ ক্ষৌরকর্ম (মাথা মোড়ানো) করতে মহাসড়ক পার হয়ে বনের পাশে গিয়েছিলেন। সেখানে পূজা শেষে বাড়ি ফিরতে গিয়ে এমন মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হন। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।