পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) হুমকির কারণে বান্দরবান সদর থেকে রুমা ও থানচি উপজেলার বাসসহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। আজ রোববার সকালে রুমা ও থানচি উপজেলার বাস কাউন্টারে লাইনম্যানদের কল করে যানবাহন চলাচল না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয় বলে জানান, পরিবহন শ্রমিকেরা।
নাম না প্রকাশের শর্তে রুমা উপজেলার পরিবহন শ্রমিকেরা জানান, রোববার সকালে সদরঘাট এলাকা থেকে বাস কাউন্টারে যাচ্ছিল লাইনম্যান লুপ্রু মারমা। তাঁকে রাস্তায় পেয়ে মারধর করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফ সদস্যরা। পরে লুপ্রু মারমাকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো যানবাহন চলাচল না করার জন্য হুমকি দিয়ে যায় তারা। ইতিমধ্যে তাঁদের একজনকে মারধর করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুমা-বান্দরবান সড়কের হুমকির খবর পেয়ে অনেকেই মোটরসাইকেল চলাচল পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মোটরসাইকেল বান্দরবান ও চিম্বুক ১২ মাইল এলাকা থেকে রুমা সদরঘাট এলাকা পর্যন্ত চলাচল করে। পর্যটকবাহী কোনো যানবাহন চলাচল করছে না।
এর আগেও ১৪ ফেব্রুয়ারি রুমা উপজেলার রিজুক ঝরণা পাড়ার এক যুবককে গুলি করার অভিযোগ উঠে কেএনএফের বিরুদ্ধে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পরের দিন রুমা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে স্থানীয়রা। সেখানে কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকেও দেখা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে থানচি উপজেলায় বাস কাউন্টারে লাইনম্যান মংসিনু মারমা বলেন, সকালে কেএনএফ পরিচয় দিয়ে বাস চলাচল না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়। অমান্য করে কেউ গাড়ি চালালে পরিণতি ভালো হবে না বলেও দেওয়া হয়। শুধু বাস নয় থানচি-বান্দরবান সড়কে কোনো মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্রা বি-৭টি চাঁন্দের গাড়ি, মাহেন্দ্রা থ্রি হুলার পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে না বলে দেওয়া হয়।
থানচি বাস স্টেশনের গাড়ি চালক মোহামম্দ নুর আলম বলেন, ‘সকালে ৭টায় আমার গাড়ি প্রথম ট্রিপ ছিল। সব যাত্রী এসে গাড়িতে উঠে গেছে। প্রথম ট্রিপ হিসেবে যাত্রীও ভরা ছিল। গাড়ি ছাড়ব ওই মুহূর্তে লাইনম্যান ফোন করে বলে, গাড়ি ছাড়া যাবে না। কেএনএফ নামে একটি সংগঠন গাড়ি না ছাড়ার জন্য হুমকি দিয়েছে।’
‘লাইনম্যানের মাধ্যমে আমরা অনুরোধ করছিলাম, যেহেতু যাত্রীরা এসে গেছে। গাড়িতেও উঠে গেছে। প্রথম ট্রিপ হিসেবে একবার যাত্রী নিয়ে চলে যায়। কোনো কাজ হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টেশনে সাইড করে রাখলাম।’ বলেন, চালক মোহামম্দ নুর আলম।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, ‘রুমা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল পক্ষ নিয়ে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, বম সোশ্যাল কাউন্সিল ও মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিংয়ে বসছি। আশা করি সমঝোতা হলে শিগগিরই গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হবে।’
থানচি ইউএনও মোহাম্মদ মামুন বলেন, সকালে পরিবহন শ্রমিকেরা বাস চলাচল বন্ধের বিষয়টি জানিয়েছে। এখনো পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে।