কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার নারীরা ঘরের কাজের পাশাপাশি কৃষিকাজ করে আসছে বহুকাল ধরে। রবিশস্য উৎপাদন, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন, সবজি ও মাছ চাষ, বনায়ন—এসব কাজে এ উপজেলার নারীরা বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি সমান অবদান রাখছেন। বাড়ির পাশে কিংবা উঠানে অনাবাদি জায়গায় শাক-সবজি, ফলফলাদির আবাদ করে সংসারে বাড়তি রোজগারের পথ করে নিচ্ছেন তাঁরা। এতে পরিবারের খরচ মিটানোর পাশাপাশি উপজেলার সামগ্রিক অর্থনীতিতেও তাঁদের অবদান বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নারীরা বাড়ির আঙিনায় ও পতিত জমির পাশাপাশি জমিতেও ফসলের বপন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এমনকি বিপণন পর্যন্ত করে আসছেন। পুরুষ কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি উপকরণ, সার বীজ, কৃষক কার্ড ও কৃষি ঋণের সুবিধা এখন নারীরাও পাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় আরও জানায়, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প থেকে দেওয়া ৫২০টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। এসব পুষ্টি বাগানে বীজ বপন থেকে শুরু করে নিয়মিত পরিচর্যাসহ সব কাজ পরিবারের নারীরাই করেন। এ ছাড়া চলিত মৌসুমে উপজেলার কৃষকদের মধ্যে ৮৮০ জনকে বিনা মূল্যে সরিষা, পেঁয়াজ, ভুট্টা ও সূর্যমুখী বীজ দেওয়া হয়। এর মধ্যেও অনেক নারী কৃষক সরকারি প্রণোদনার এসব বীজ পেয়েছেন।
উপজেলার মালাপাড়া মাঠে গিয়ে দেখা হয় কৃষানি নাসিমা বেগমের সঙ্গে। তাঁর আবাদ করা লালশাকের জমিতে আগাছা পরিচর্যা করছিলেন। কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ৩০ শতক জমিতে লালশাকের বীজ ফেলেছি। এতে আমার সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। লালশাকের চারা উঠেছে। এখন এর থেকে আগাছা পরিষ্কার করতেছি। এসব শাক বিক্রির উপযোগী হলে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। এতে পরিবারে কিছুটা হলেও আর্থিক জোগান দিতে পারব।’
উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. তাহমিনা হক পপি বলেন, কৃষি উন্নয়ন ও কৃষি অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে নারী কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে অবশ্যই নারীর প্রতি বৈষম্যহীন সব উন্নয়নধারা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধানে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকারের নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যেই নারীর সম-অধিকার ও সমমূল্যায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নারী কৃষকদের এগিয়ে নিতে সরকারের পাশাপাশি সবার সচেতনতা দরকার।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রান্তিক সুবিধাদি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে কিষানিদের অগ্রাধিকার দেওয়াসহ আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলে উন্নয়নের পথ সুগম হবে। নারীর ভাগ্যোন্নয়ন হলে নারীরা এ দেশের কৃষি উন্নয়নসহ অন্য উন্নয়নকে আরও বেগবান করতে পারবেন।