বান্দরবানের থানচি উপজেলায় কয়েক হাজার মানুষের বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট লাঘবে ২০২২ সালে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে ভূমি জটিলতাসহ নানা কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। এখনো ঝিরি, পাহাড়ি ঝরনা ও কূপের পানি পান করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে যেমন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, তেমনি বাসিন্দারা আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগে। তারা পানিসংকট নিরসন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে দ্রুত প্রকল্পটি চালুর দাবি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সদরের টিঅ্যান্ডটি পাড়ায় উপজেলাবাসীর মাঝে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০২২-২৩ সালে ৩৭ শতক জায়গায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। দরপত্রের মাধ্যমে মি. ইউটিমং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। মূল ঠিকাদার আবুল কালাম সেন্টু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা চিংথোয়াই মারমা নামের দুজন যৌথভাবে কাজটি বাস্তবায়ন করছিলেন। প্রথমে প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে থেমে যায়।
এদিকে প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় স্থানীয়দের অনেকটা বাধ্য হয়ে ঝিরি, পাহাড়ি ঝরনা ও কূপের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পানি পান করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নারী, শিশুসহ সাধারণ লোকজন।
টিঅ্যান্ডটি পাড়ার বাসিন্দা রেহেনা আকতার বলেন, ‘বহু বছর ধরে আমরা পানি নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। অনেক দূরে গিয়ে ঝিরি-ঝরনা থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়, তা-ও স্বাস্থ্যসম্মত না। শুষ্ক মৌসুমে কোনো রকম কষ্ট করে ঝিরি-ঝরনা থেকে পানি সংগ্রহ করা গেলেও বর্ষায় তা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে রমজান মাসে পানির অভাবে অজু পর্যন্ত করতে পারি না। শুনেছি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে থানচিবাসীর জন্য একটি পানির হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম পাহাড়ের ওপরে পানির হাউস নির্মাণের সময়। বছর যায় আর আসে, কিন্তু কাজ শেষ হয় না।’
সমাজপতি নুমংপ্রু মারমা বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে নদী ও ঝিরি-ঝরনার পানি শুকিয়ে গিয়ে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। এক কলসি পানির জন্য পাড়ি দিতে হচ্ছে কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ। অথচ এসব পাহাড়ি এলাকায় পানীয় জলের চাহিদা পূরণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রতিবছর বাস্তবায়ন করে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি-ঝরনা ও নদীর পানি শুকিয়ে গেলে কাজে আসে না এসব প্রকল্প।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, নয়-ছয় করে প্রকল্পের টাকা লোপাট এবং নিয়ম মেনে কাজ না করায় সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না বেশির ভাগ প্রকল্প। যে কারণে শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই অকেজো হয়ে পড়ে দুর্গম এলাকায় স্থাপিত টিউবওয়েল, রিংওয়েল ও জিএফএসসহ নানা পানি সরবরাহ প্রকল্প। তাই শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি-ঝরনার পানি শুকিয়ে গেলে দুর্গম এলাকায় দেখা দেয় পানীয় জলের তীব্র সংকট।
বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার মধ্যে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ কারণে প্রকল্পটি চালু করতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে ভূমিসংক্রান্ত সমস্যা নিরসন হলে দ্রুত এটি চালু করা হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।