হোম > সারা দেশ > বাগেরহাট

‘গুপ্তধনের’ খোঁজে প্রাচীন মন্দিরে গোপনে খনন

আবুল আহসান টিটু, ফকিরহাট (বাগেরহাট) 

বাগেরহাটের ফকিরহাটের জোড়া শিবমন্দির। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাটে প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন পাতাল জোড়া শিবমন্দিরের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে গুপ্তধনের সন্ধানে অবৈধভাবে গোপনে খননের অভিযোগ উঠেছে কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন সংস্কার ও নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে থাকা ঐতিহাসিক এই ধর্মীয় স্থাপনার শুধু সামান্য ধ্বংসাবশেষই এখন অবশিষ্ট। তার নিচে থাকা সুড়ঙ্গটিতে রাতের আঁধারে গোপনে মাটি খোঁড়া হচ্ছে।

প্রশাসনের তদারকি না থাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে ঝুঁকি। এতে উদ্বিগ্ন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়। স্থানীয় লোকজনের মুখে প্রচলিত আছে, মন্দিরের পাতাল সুড়ঙ্গে সোনার মূর্তি, কষ্টিপাথরের মূর্তি, স্বর্ণমুদ্রা, সোনার তৈজসসহ বিপুল গুপ্তধন লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, চুন-সুরকি ও পোড়ামাটির তৈরি জোড়া শিবমন্দির দুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। খসে পড়া পলেস্তারা, দেয়ালের ফাটল এবং তার ভেতর থেকে জন্মানো বৃক্ষ মন্দিরটিকে আরও নড়বড়ে করে তুলেছে। একটু দূরে ঘন জঙ্গলের ভেতরে পাতাল শিবমন্দিরের সুড়ঙ্গের পাশে দেখা যায় সদ্য খনন করা মাটির স্তূপ। মন্দির কমিটির অভিযোগ, একটি কুচক্রী মহল দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে সেখানে খনন করছে গুপ্তধনের আশায়।

জানা গেছে, উপজেলার পিলজংগ ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর-পশ্চিম কোণের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত এ দুটি ধ্বংসপ্রায় জোড়া শিবমন্দির বহু পুরোনো। এখানে থাকা কষ্টিপাথরের দুটি মূল্যবান মূর্তি প্রায় ২৫ বছর আগে চুরি হয়ে যায়। তিন বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ৪০ দিনের কর্মসূচির অর্থায়নে প্রবেশপথ সংস্কার ও জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়। এর পর থেকে শিবরাত্রি ও অন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভক্তদের উপস্থিতিও বাড়ে। তবে তার একটু দূরে বন-জঙ্গলে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা পাতাল শিবমন্দিরটি লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল। সম্প্রতি রাতের আঁধারে সেখানকার প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু ঢিবির ওপর অবস্থিত সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে মাটি অপসারণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ভূগর্ভস্থ প্রায় ২৫টি সিঁড়ি পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। দিনদুপুরে মন্দির কমিটির সদস্যরা গিয়ে সেখানে কোদাল, শাবল, ঝুড়ি, বালতি ও ত্রিশূল পড়ে থাকতে দেখেন।

মন্দির কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঘটনাটি নিয়ে থানায় জিডি করতে চাইলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল তাঁদের চুপ থাকতে চাপ দিয়েছে। নিরাপত্তার ভয়েই তাঁরা অভিযোগ করতে পারেননি।

মন্দির কমিটির উপদেষ্টা সাধন কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার দাস জানান, লোকমুখে প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই এলাকায় প্রায় ৩৬০ ঘরে ব্রাহ্মণ বসবাস করতেন। এখানকার এক সাধু ব্রাহ্মণ কাশী যাত্রার পথে ডাকাতদের কবলে পড়েন। ডাকাতেরা তাঁর কোনো সম্পদ না পেয়ে তাঁকে বন্দী করে। কিছুদিন পর ডাকাত দলের ডেরায় মহামারি দেখা দিলে ওই সাধু লতা-পাতার ওষুধ দিয়ে তাদের সেবা করেন এবং সুস্থ করে তোলেন। পরে ডাকাতেরা সেই পেশা ছেড়ে তাঁর ভক্তে পরিণত হন এবং এলাকায় এসে পাতাল শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ডাকাতেরা তাঁদের সংগৃহীত সম্পদ দেবীর উদ্দেশে অর্পণ করেই সেবায় নিয়োজিত হন। সুড়ঙ্গের ভেতর উঁকি দিলে নিচের দিকে বহু দূর পর্যন্ত চুন-সুরকি দিয়ে বানানো সিঁড়ি দেখা যায়, যেগুলো পরে দুই দিকে ভাগ হয়ে গেছে। লোকমতে, মাটির নিচে বেশ কয়েকটি কক্ষ ছিল, যেখানে শিব ও কালীর আরাধনা করা হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিবমন্দিরটি সংরক্ষণ, অরক্ষিত সুড়ঙ্গ বন্ধ, কুচক্রী মহলের খনন তৎপরতার তদন্ত এবং স্থায়ী নিরাপত্তাব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়। তাদের দাবি, ঐতিহাসিক নিদর্শনটি প্রত্নসম্পদ হিসেবে দ্রুত সংরক্ষণ করা জরুরি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, বিষয়টি আগে জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, ‘মন্দিরটি খুবই পুরোনো। দুই বছর আগে আমি এটি পরিদর্শন করেছি। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার বিষয়টি জানতাম না। তবে এটি অবশ্যই সংরক্ষণ করা উচিত।’

সাবেক সংসদ সদস্য নূর আফরোজ মারা গেছেন

বাগেরহাটের চিতলমারী: হাসপাতাল চলছে ২ চিকিৎসকে

বিদ্যুৎ উৎপাদনে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের রেকর্ড

বাগেরহাটে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত

বাগেরহাটে নদীতে জালিবোট উল্টে নারী-শিশুসহ আহত ২০

মোংলায় ৩২ কেজি হরিণের মাংসসহ শিকারি আটক

স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ফকিরহাটে আগুনে পুড়ল শতবর্ষী গাছ

চিতলমারীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নারীসহ আহত ৮

তিন দফা দাবিতে দক্ষিণ অঞ্চলের ১৮ রুটে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা