রবীন্দ্রকাব্য সমালোচক হিসেবে পরিচিত আবু সয়ীদ আইয়ুবের জন্ম কলকাতার ওয়েলেসলি স্ট্রিটের উর্দুভাষী এক বনেদি পরিবারে। অবাঙালি পরিবারটি তিন পুরুষ ধরে কলকাতায় বসবাস করলেও বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁদের সখ্য ছিল না। তাঁর নিজ স্বীকারোক্তি, ‘ইংরেজিতে গীতাঞ্জলি পড়ে মুগ্ধ হয়ে মূল বাংলা ভাষায় “গীতাঞ্জলি” পড়ার দুর্দম আগ্রহই আমাকে বাংলা শিখতে বাধ্য করে।’ রবীন্দ্রপ্রেমে তাঁর বাংলা ভাষা শেখা এবং বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দেওয়ার উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রকাব্য বিচারের জন্য লিখতে শুরু করেন।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি অনার্স পাস করেন। এরপর এমএসসিতে ভর্তি হয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানে। কিন্তু এক বছর ড্রপ দিয়ে দর্শনে এমএ পাস করেন। এরপর তিনি ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত রকফেলার স্কলার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতচর্চা বিভাগে অধ্যাপনা করেন।
১৯৬৮ সালে প্রকাশিত ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই। বইটি প্রকাশের পরই সাড়া ফেলে। এরপর তাঁর চিন্তার অভিনবত্ব প্রকাশ পেয়েছে ‘পান্থজনের সখা’, ‘পথের শেষ কোথায়’ এবং ‘ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক’ প্রভৃতি গ্রন্থে। রবীন্দ্র সৃষ্টি ও কর্ম মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাঁর আলোচনা হয়ে উঠেছে দর্শনতত্ত্বাশ্রয়ী, জীবন-জগৎ সম্পর্কে রবীন্দ্র-ভাবনার তাত্ত্বিক সারাংশ।
আধুনিকতা ও মৌলিক চিন্তার অধিকারী আবু সয়ীদ আইয়ুব। তিনি তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে চিন্তার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছেন। আর দেখিয়েছেন বাংলা ভাষায় সাহিত্য সমালোচনার নতুন উৎসমুখ। তাঁকে শিবনারায়ণ রায় ‘সৌম্য প্রমিথিউস’ অভিধায় চিহ্নিত করেছিলেন। সমকালীন তো বটেই, উত্তরকালেও স্বতন্ত্র চিন্তার ধারক হিসেবে পরিচিত হবেন তিনি।
তিনি বিয়ে করেছিলেন অধ্যাপিকা গৌরী দত্তকে। বিয়ের পর একসময় তিনি ‘আবু সয়ীদ আইয়ুব দত্ত’ নামে কিছু রচনা প্রকাশ করেন। আকৈশোর ভগ্নস্বাস্থ্যের অধিকারী আবু সয়ীদ আইয়ুব দীর্ঘকাল পার্কিনসন্স রোগে ভোগার পর ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।