গওহর জানকে বলা হয় ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের সম্রাজ্ঞী। তিনিই উপমহাদেশে সংগীতে প্রথম নারী সুপার স্টার ছিলেন। জন্মসূত্রে তাঁর নাম ছিল এইলিন অ্যাঞ্জেলিনা ইয়ার্ড।
অ্যাঞ্জেলিনার জন্ম ১৮৭৩ সালের ২৬ জুন ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে এক ইহুদি পরিবারে। ছয় বছর বয়সেই তাঁর মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তাঁর মা তাঁকে নিয়ে চলে আসেন বেনারসে। সেখানে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ‘বদি মালকাজান’ হয়ে যান আর কন্যার নাম রাখেন ‘গওহর জান’। এরপর তাঁরা চলে আসেন কলকাতায়। এখানে এসে গওহর এক নবাবের নর্তকী হিসেবে কাজ পান। মা তাঁকে হিন্দুস্তানি উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। নবাবের দরবারে আসতেন ভারতবর্ষের অনেক নামকরা সংগীত গুরু। তাঁদের সান্নিধ্যে সংগীতচর্চা শুরু করেন গওহর। চরণ দাসের কাছে বাংলা কীর্তন শেখার পাশাপাশি রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা শুরু করেন। একই সঙ্গে সংগীতের নানা ধারা—ধ্রুপদ, টপ্পা, খেয়াল, ঠুমরি, ভজন, দাদরা, চৈতি, গজল, ধামার, বিষ্ণুপুরী ও কাজরি গানেও পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। গান ও নাচের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষা শিখতে শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে গানের আসরে অভিষেক ঘটে তাঁর।
১৯০২ সালের ১১ নভেম্বর ভারতবর্ষের প্রথম রেকর্ডিং আর্টিস্ট হিসেবে ইতিহাস গড়েন গওহর জান। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে ১০টির বেশি ভাষায় প্রায় ৬০০টি গান রেকর্ড করেছেন তিনি।
যশ-খ্যাতির শিখরে ওঠা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সুখের ছিল না। গুজরাটের বিখ্যাত অভিনেতা অমৃত কেশব নায়কের সঙ্গে সত্যিকারের প্রেমের সম্পর্ক হলেও তাঁর অকালমৃত্যুতে সেটার সমাপ্তি ঘটে। এরপর বয়সে ছোট ব্যক্তিগত তবলচি সৈয়দ আব্বাসকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁর সম্পত্তি দেদার নষ্ট করেন আব্বাস। একসময় বিবাহবিচ্ছেদ হলেও সম্পত্তির আর কিছুই থাকেনি।
নিঃস্ব ও একাকিত্বের মধ্যে ১৯৩০ সালের ১৭ জানুয়ারি ৫৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান। মৃত্যুর সময় তাঁর পাশে কেউ ছিল না।