এমএ পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরীক্ষা দেবেন না। বন্ধু মোহন রায়হান রুদ্রকে নিয়ে এলেন নিজের ঘরে। বললেন, যে করে হোক পরীক্ষা দিতে হবে। কবি মোশতাক দাউদীও ছিলেন মোহন রায়হানের সঙ্গে। কিন্তু পড়াশোনা না করে কি পরীক্ষা দেওয়া যায়? তখন ভাবা হলো, ভালো নোট জোগাড় করতে হবে। সেই নোট পড়ে বৈতরণি পার হতে হবে।
কীভাবে জোগাড় করা যাবে নোট? ঝর্ণা বলে এক সহপাঠী ছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আসতেন ক্লাসে। তিনি খুব ভালো নোট করতেন। যাঁরা লেখাপড়ার ধার ধারেননি, তাঁরা এখন ঝর্ণার কাছে ধার চাইলেন তাঁর নোট। ঝর্ণা রাজি হলেন নোট দিতে। তখন বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাগারের কেয়ারটেকার ছিলেন জনৈক রতন, যাঁকে রতনদা নামেই ডাকতেন তাঁরা। তাঁকে ধরে সেখানকার হুমায়ুন আজাদের গবেষণা ঘর ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে নিলেন। সেখানেই হতে থাকল পড়াশোনা। পরীক্ষা-পাসের সেই উদযোগে যুক্ত হলেন রুদ্র, মোশতাক দাউদী, মঈনুস সুলতান, মিঠু, শামীমা বেবী আর শামসাদ বেবী। শুরু হলো গ্রুপ স্টাডি। ঝর্ণার দেওয়া নোট জোরে জোরে পড়েন মোহন রায়হান, এরপর সবাই এক এক করে আলোচনা করেন। তাতে তৈরি হয়ে যায় পড়া।
দিনের বেলায় তো পড়াশোনা ভালোই এগোয়। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই রুদ্র, মঈনুস সুলতানেরা উসখুস করতে থাকেন। সে সময় পানীয়ের নেশা তাঁদের টানে। কিছুদিন বেঁধে রাখা গেলেও একসময় সন্ধ্যাবেলাটা হয়ে ওঠে উধাও হওয়ার উৎকৃষ্ট সময়। একদিন রাতে বিশাল এক সাইনবোর্ড নিয়ে হাজির তাঁরা! চানখাঁরপুল মোড়ে সাইনবোর্ডটিতে লেখা ছিল ‘এলেম দ্বারা চোর ধরা হয়’। বেসামাল মাথায় তাঁদের মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছিল: ‘এলেম দ্বারা চোর ধরা হয়’, নাকি ‘চোর দ্বারা এলেম ধরা হয়?’ এই প্রশ্নের সমাধান করতে হবে। এ কারণেই অনেক কষ্ট করে সাইনবোর্ডটা তিনতলায় টেনে ওঠানো হয়েছে।
সূত্র: মোহন রায়হান, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ স্মারকগ্রন্থ, পৃষ্ঠা ১৭০-১৭১