বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে আমরা ঔপন্যাসিক হিসেবেই চিনি। তাঁর বাবা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ব্রিটিশ সরকারের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। পরে হুগলির ডেপুটি কালেক্টর হন। বঙ্কিমচন্দ্রও বিএ পাস করে বাবার পথেই হাঁটেন।
বঙ্কিমচন্দ্রকে নিয়ে বহু কাহিনি ছড়িয়ে আছে। বহু বিতর্কও আছে তাঁকে নিয়ে। বাংলা গদ্য নিয়ে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়েও বহু কথা বলা হয়। তাতে কখনো প্রশংসা থাকে, কখনো থাকে সমালোচনা।
এখানে শুধু বলে রাখি, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লেখক হতে পেরেছেন সে সময় চারটি স্বতন্ত্র ধারা ক্রিয়াশীল ছিল বলে। উনিশ শতকের শুরুতে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরদের আধুনিক চিন্তাধারায় ঘটেছিল বাংলা গদ্যের বিকাশ, সে সময় সংবাদপত্র ও সাময়িকীর প্রকাশনাও বাড়তে থাকে এবং এ সময়েই হিন্দুত্ববাদের উত্থান হয়। এ সময় কলকাতায় ইংরেজি আর পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাব হয়। তারই ফসল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন প্রথম বাঙালি গ্র্যাজুয়েট। কিন্তু সে পরীক্ষায় বাংলাতেই ফেল করেছিলেন বঙ্কিম। যে বঙ্কিমচন্দ্রের বই না পড়লে পড়ুয়া হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে এখন, সেই বঙ্কিম কিনা ফেল করেছিলেন বাংলায়! আর তাঁর পরীক্ষক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর! পরে তাঁকে গ্রেস দিয়ে পাস করাতে হয়।
অনেকেই মনে করেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে এ জন্য কোনো দিন ক্ষমা করতে পারেননি বঙ্কিম। বিধবাবিবাহ আন্দোলন যখন শুরু করেন বিদ্যাসাগর, তখন তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্কিম–এমন একটা কথাও চালু আছে। তবে তা কতটা সত্য, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ, বঙ্কিমের লেখা প্রবন্ধে বিধবাবিবাহের পক্ষেই তাঁর অবস্থান দেখা যায়।
সংস্কৃতঘেঁষা যে বাংলায় পরীক্ষাটা হয়েছিল, মুখস্থবিদ্যা না থাকলে তাতে পাস করা কঠিন। পরীক্ষার বাংলাটা বঙ্কিমের দখলে ছিল না। শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ‘দেশ’ পত্রিকায় সেই প্রশ্নপত্রটি পেয়ে পরীক্ষা দিতে বসেছিলেন। টেনেটুনে তিনি উত্তর দিতে পেরেছিলেন ১৬ নম্বরের!
সূত্র: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বক্তৃতা সংগ্রহ, পৃষ্ঠা: ৪৮-৪৯