শিল্পী হামিদুর রাহমান আরেক শিল্পী নভেরার সঙ্গে মিলিতভাবে শহীদ মিনারের নকশাকার হিসেবে সমধিক পরিচিত। ভাষা আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৫৬ সালে তৎকালীন সরকার একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য নকশা আহ্বান করে। ওই প্রতিযোগিতায় তাঁদের নকশা নির্বাচিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা শহীদ মিনার ধ্বংস করে দেয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে তাঁর নকশা অবলম্বনে আবার শহীদ মিনার গড়ে তোলার প্রকল্প গ্রহণ করে।
হামিদুর রাহমান ঢাকা আর্টস স্কুল (বর্তমান চারুকলা অনুষদ) থেকে চিত্রকলার ওপর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি চিত্রকলার ওপর উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইউরোপে যান। প্যারিসের ইকোল দ্য বোজ আর্টসে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
১৯৫৩ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স একাডেমি দ্য বেল আর্ট থেকে ম্যুরাল পেইন্টিংয়ের ওপরে গ্রীষ্মকালীন কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর লন্ডনের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ডিজাইন থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৬ সালে দেশে ফিরে আবার ১৯৫৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় একাডেমি অব ফাইন আর্টসে ভিজিটিং লেকচারার হিসেবে যোগ দেন এবং চিত্রকলা বিষয়ে গবেষণায় নিযুক্ত হন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হলো—ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক শহীদ মিনারের নকশা প্রণয়ন; পাকিস্তানে অনেক ভবনের দেয়ালে এবং ঢাকার পাবলিক লাইব্রেরির দেয়ালে ম্যুরাল করেছেন তিনি। এ ছাড়া ম্যুরাল করেছেন লন্ডন, করাচি, ব্রাসেলসের বিভিন্ন ভবনে। বিশ্বের বিভিন্ন দেয়ালে তাঁর ম্যুরালের মোট আয়তন ২০ হাজার বর্গফুটেরও বেশি। পেশাগত জীবনে তিনি কোথাও স্থির হননি। চিত্রশিল্পের নেশায় ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সর্বশেষ অধ্যাপনা করেছেন কানাডার ম্যাকডোনাল্ড কার্টিয়ার পলিটেকনিক, মন্ট্রিয়লে। সেখানেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৮০ সালে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
১৯৮৮ সালের ১৯ নভেম্বর কানাডার মন্ট্রিয়লে হামিদুর রাহমান মৃত্যুবরণ করেন।