পল্টনের আউটার স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল কোরিয়ানদের ছড়াছড়ি। দেখে খানিকটা স্বস্তিও লাগল। তাদের উদ্দেশেই যে সেখানে ছুটে যাওয়া! আরও নির্দিষ্ট করে বললে অলিম্পিকে সোনাজয়ী দুই আর্চার—জাং হি মিন ও নাম সু হিয়নের খোঁজে। অনুশীলনে ব্যস্ত থাকায় কথা বলে বিরক্ত করার আর ইচ্ছে জাগেনি। টিম ম্যানেজারের মাধ্যমে অনুরোধ করা হলে রাজি হয়ে যান সঙ্গে সঙ্গে।
ঢাকায় আগামীকাল পর্দা উঠছে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের। ৮-১২ নভেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে হবে প্রথম পর্ব। পরের দুই দিন চূড়ান্ত পর্বের ভেন্যু আর্মি স্টেডিয়াম। টুর্নামেন্ট সামনে রেখে জাতীয় স্টেডিয়ামে তাঁবু বসানোয় শোভা পাচ্ছে সাজসাজ রব। এই সাজসজ্জার ছোট ভার্সন দেখা গেল আউটার স্টেডিয়ামে। এখানেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের আর্চাররা।
দক্ষিণ কোরিয়ার আর্চাররা দল বেঁধে ঢাকায় এসেছেন গত পরশু। এশিয়ান আর্চারি তো বটেই, বিশ্ব আর্চারিতেও সুনাম রয়েছে কোরিয়ার। অলিম্পিকে তারা নিয়মিত পাচ্ছে পদকের দেখা। রিকার্ভ নারী এককে হি মিন ও সু হিয়নের আগমনই বলে দেয় এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না তাঁরা। দুজনের লক্ষ্য একটাই, ঢাকার আকাশে নিজ দেশের পতাকা ওড়ানো।
২০২০ টোকিও অলিম্পিকে রিকার্ভ নারী দলীয় ইভেন্টে সোনা জেতেন হি মিন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও দলগত ও ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা আছে তাঁর। ‘ঢাকায় কেমন লাগছে?’ গতকাল জানতে চাইলে লাজুক কণ্ঠে হি মিন বলেন, ‘প্রথমবার এখানে এসেছি। কিছুটা অবাক হয়েছি। বেশ ভালো লাগছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে আগে তেমন কিছুই জানা ছিল না।’
১৯ বছর বয়সী সু হিয়নের কাছে একই প্রশ্ন করলে অকপটে বলেন, ‘এখানকার পরিবেশ একটু ভিন্ন রকম। বেশ আকর্ষণীয় লাগছে। খেলার সময় এ দেশের নামটা বেশ কয়েকবার শুনেছি। বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে আগে কয়েকটি টুর্নামেন্টে সাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু কখনো ওয়ান ভার্সেস ওয়ান খেলিনি।’
বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সু হিয়ন। ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে তিনিও সোনা জেতেন কোরিয়ার হয়ে। ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনার লড়াইয়ে হেরে যান লিম সি হিয়নের কাছে, ‘অলিম্পিকে জায়গা করে নেওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাকে। যখন সোনা জিতলাম, বিশ্বাসই হচ্ছিল না। অবাস্তব লাগছিল।’
হি মিনের পদক পুরোনো হলেও অনুভূতি এখনো তাজা, ‘চার বছর হয়েছে সোনা জিতেছি, কিন্তু এখনো ভাবলে বেশ দারুণ লাগে। ছোট থাকতে স্কুলের শারীরিক শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, একবার আর্চারি চেষ্টা করে দেখো। কারণ, আমার শারীরিক গঠন বেশ ভালো। সেই থেকে শুরু। সেই পরিশ্রম পরিণতি পায় অলিম্পিকে সোনা জেতার মাধ্যমে।’
সু হিয়নের আর্চার হয়ে ওঠার গল্পটা ভিন্ন, ‘খেলাটা খুব শান্ত ও স্থির হলেও এর মধ্যে রোমাঞ্চ আছে। এটাই এর আলাদা আকর্ষণ। আমার সেটা ভালো লাগে। আমি বেশ মনোযোগী। শুট করার সময় কক্ষবিচ্যুত হয় না।’
আর্চারদের জন্য ঢাকার বাতাস সেভাবে প্রতিরোধক হওয়ার শঙ্কা নেই। তবে হলেও অসুবিধা নেই হি মিনের, ‘আমি বাতাসের সঙ্গে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারি। কোনো শট বুলসআই হলে সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’
রিকার্ভ নারী ইভেন্টে আগের চেয়ে অনেক দুর্বল দল বাংলাদেশ। তবু আশাহত হতে না করছেন অলিম্পিক মাতানো কোরিয়ার দুই আর্চার। তির-ধনুকের খেলায় নিজেদের ছাপ রাখার পাশাপাশি সম্প্রীতির বন্ধনও ছড়িয়ে দিতে চান তাঁরা, ‘বাংলাদেশকে তাদের সেরাটা দিতে হবে। আমরা তাদের উৎসাহ দেব।’
নাটক-সিনেমার মাধ্যমে কোরিয়ান সংস্কৃতি বাংলাদেশের কাছে অনেকটাই পরিচিত। যা অজানা বিশ্বজয়ী আর্চারদের। ঢাকার আবহাওয়া তাঁদের কাছে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গরম লাগলেও প্রতিকূলতা পেরিয়ে ভালো স্মৃতি নিয়ে ফিরতে চান তাঁরা।