ব্যালন ডি’অর তো পরের আলোচনা, কিন্তু ভক্তরা এখনই তাঁকে ডাকতে শুরু করেছেন ‘ব্যালন দুয়ে’! মাত্র ১৯ বছর বয়সী তরুণ যা করে দেখিয়েছেন, এমন আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আক্রমণ, মধ্যমাঠ, রক্ষণ—সব জায়গায় তাঁর বিচরণ। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন পিএসজির জয়ের নায়ক দিজিরে দুয়ে-ই।
লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়ার, কিলিয়ান এমবাপ্পে, আনহেল দি মারিয়ারা একসঙ্গে খেলেও পিএসজিকে ইউরোপ সেরার স্বাদ দিতে পারেননি। বড় তারকা নেই, লুইস এনরিকের কাছে ছিল দুয়ে-দেম্বেলের মতো নিবেদিত ফুটবলাররা। নিবেদনটা কেমন? গত বছর দুয়ে তো বায়ার্ন মিউনিখের লোভনীয় প্রস্তাবের পাশ কাটিয়েই পছন্দের ক্লাব পিএসজিতে যোগ দেন। রেঁনে থেকে ৫০ মিলিয়ন ইউরোয় পিএসজি তাঁকে কেনে। কিন্তু তিনি চাইলে ভালো বেতন ও বোনাসসহ বায়ার্ন যেতে পারতেন। বোনাসসহ ৬০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব ছিল বায়ার্নের।
দুয়ে পিএসজিতে যোগ দিয়ে আইডল নেইমার-মেসি কাউকেই পাননি। গত মৌসুমে দল ছাড়েন কিলিয়ান এমবাপ্পেও। ক্লাবটির দায়িত্ব নিয়ে কোচ এনরিকে খুঁজছিলেন এমবাপ্পের স্থলাভিষিক্ত। সেভাবেই তৈরি করেন দুয়েকে। ফরাসি ফুটবলার নিজেই জানিয়েছেন, এনরিকে তাঁর টেকনিক নিয়ে অনেক কাজ করেছেন, বিশেষ করে এমবাপ্পে চলে যাওয়ার পর। এনরিকেও তাই বিনয়ী শিষ্যকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ওর (দুয়ে) টেকনিক্যাল স্কিল, ফিজিক্যাল পারফরম্যান্স আর ব্যক্তিত্বে আমি মুগ্ধ।’
বাইরের বিনয়ী দুয়ের পারফরম্যান্স মাঠে একেবারেই ‘খুনে’। আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ১২ মিনিটে তাঁর দারুণ পাস থেকে গোলেন করেন আশরাফ হাকিমি। ২০ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে নিজেই করেন দুর্দান্ত এক গোল। ৬৩ মিনিটে আবারও গতিময় আক্রমণে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন দুয়ে। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনার কথা যখন ধারাভাষ্যকক্ষে আলোচনা হচ্ছিল, তখনই ৬৫ মিনিটে তাঁকে তুলে নেন কোচ। ম্যাচ ততক্ষণে পিএসজির কবজায়। তাঁর আগে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে জোড়া গোল করার রেকর্ড গড়লেন। কম বয়সী অ্যাসিস্ট করা প্রথম খেলোয়াড়ও তিনি।
আইভরিয়ান বাবা ও ফরাসি মায়ের কোল জুড়ে ২০০৫ সালের ৩ জুন ফ্রান্সের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর অঁজেতে জন্ম দুয়ের। দ্বৈত নাগরিকত্ব। জন্মদিনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহারটাও বোধ হয় পেয়ে গেছেন। তাঁর বড় ভাই গুয়েলা দুয়েও লিগ ওয়ানের ক্লাব স্ট্রাসবুর্গে খেলেন। দুয়ে জাতীয় দল হিসেবে মায়ের দেশ ফ্রান্সকে বেছে নিলেও গুয়েলা খেলেন বাবার আইভরি কোস্টে।
অভিষেক মৌসুমেই পিএসজির হয়ে ‘কোয়াড্রপল’ জিতলেন দুয়ে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৪ ম্যাচে ১৫ গোলের পাশাপাশি ১৬ অ্যাসিস্ট। প্রথমবার পিএসজিকে চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বাদ দিয়ে বললেন, ‘বলে বোঝাতে পারব না কেমন লাগছে। চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় করাটা ছিল আমাদের একটা স্বপ্ন। এটা আমারও স্বপ্ন, সত্যি বলতে পুরো দলের সবারই স্বপ্ন ছিল এটা জেতা।’