বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর এর চেয়ে চাপে আগে কখনো পড়েননি কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। দলে হামজা চৌধুরী-শমিত শোমের মতো উঁচু মানের খেলোয়াড় থাকলেও খুঁজে পাচ্ছেন না সঠিক কম্বিনেশন। এনে দিতে পারছেন না কাঙ্ক্ষিত তৃপ্তি।
হংকংয়ের বিপক্ষে আজকের ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য যেমন বাঁচা-মরার, কাবরেরার জন্যও চাকরি টিকিয়ে রাখার শেষ সুযোগ। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে ম্যাচ। কাবরেরা কি পারবেন জয়ের শিকল ভাঙতে।
বরাবরে মতো এবারও সংবাদ সম্মেলনে ছড়িয়েছেন বিশ্বাস ও প্রত্যাশার বাষ্প। মাঠে অবশ্য প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মেলবন্ধনটা ঠিক ঘটাতে পারে না তাঁর কৌশল। আজ বেশ দৃপ্ত কণ্ঠেই বলেন, ‘আমরা এখন প্রায় সেই দেয়ালের সামনে, যেটা ভাঙতে পারলে আমরা পরের স্তরে যেতে পারব। আসলে আমরা বিশ্বাস করি, এরই মধ্যে সেই স্তরে পৌঁছে গেছি, কিন্তু দরকার শুধু বাধাটা পেরিয়ে জয় পাওয়া।’
কাবরেরার প্রথম একাদশ কী হবে, সেটা এক রহস্যই বটে। ঢাকায় হংকংয়ের বিপক্ষে হোম ম্যাচে ৪-৪-২ ছক সাজিয়েছেন তিনি। যে সোহেল রানা জুনিয়র গত জুনে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে স্কোয়াডেই ছিলেন না, তাঁকে রেখেছিলেন হামজার পাশে। ছিলেন সোহেল রানা সিনিয়রও। হামজা চৌধুরী ও তারিক কাজী বাদে শুরুর একাদশে ছিলেন না কোনো প্রবাসী ফুটবলার। এর মাশুল দিতে হয় ৩-১ গোলে পিছিয়ে থেকে।
আজ হয়তো এমন ভুল করবেন না কাবরেরা। শুরুর একাদশে দেখা যেতে পারে কানাডাপ্রবাসী মিডফিল্ডার শমিত শোমকে। ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে ‘পুরোপুরি ফিট’ তপু বর্মনেরও। অভিষেকে আলো ছড়ানো জায়ান আহমেদ খেলার সুযোগ পাবেন তো? নাকি লেফট ব্যাকে ভরসা থাকবে অভিজ্ঞ সাদ উদ্দিনের ওপর। কাবরেরার ইঙ্গিত, ‘আমরা সব সময় চাই, বদলি খেলোয়াড়েরা মাঠে নেমে যেন ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারে। আর ঠিক সেটাই ঘটেছিল সেদিন। একাদশের খেলোয়াড় ও বদলি—দুই পক্ষই তাদের ভূমিকা চমৎকারভাবে পালন করেছে। কালও একই রকম কিছু ঘটবে, সবার ভূমিকা একই থাকবে।’
হংকংয়ে গিয়ে পছন্দমতো অনুশীলন ভেন্যু পায়নি বাংলাদেশ। তাই বলে মনোযোগে ঘাটতি নেই কাবরেরার, ‘হংকংয়ের সুবিধাগুলোর মান ঠিক কেমন, সেটা আমি জানি না, তবে যা পেয়েছি, তা গড়পড়তা মানেরই বলা যায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি এসব নিয়ে বেশি গুরুত্ব দিই না।’
আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতেও অসুবিধা হয়নি ফুটবলারদের। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার মনে হয় না খুব ঠান্ডা থাকবে—হয়তো ২১ বা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই আবহাওয়া খেলোয়াড়দের জন্য একদম উপযুক্ত।’
স্বাগতিক দল হিসেবে হংকং বলা যায় চড়াও থাকবে শুরু থেকে। কাই তাক স্টেডিয়ামে তাদের জন্য অকুণ্ঠ সমর্থন অপেক্ষা করছে। ছাদ ঢাকা থাকলে প্রায় ৫০ হাজার সমর্থকের গর্জন কানে আসবে আরও জোরালোভাবে।
এমন পরিবেশে খেলার অভিজ্ঞতা নেই বাংলাদেশের। মাঠের চৌহদ্দির বাইরে কী হবে, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না জামাল। তাঁর ভাবনায় শুধুই ৯০ মিনিটের লড়াই, ‘ম্যাচ শুরুর আগে দর্শকদের উপস্থিতি অনুভব করা যায়, কিন্তু খেলা চলাকালীন সেটা তেমন অনুভব করা যায় না। কারণ, তখন শরীরের হরমোন এত বেশি থাকে যে পুরোপুরি খেলায় মনোযোগী থাকতে হয়। তবে আমাদের কাজ হলো কাল (আজ) তিন পয়েন্ট অর্জন করা।’
বাংলাদেশের জন্য নিশ্চয় বেশ বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে রাফায়েল মেরকিস। ঢাকায় বদলি নেমে হ্যাটট্রিক করা এই ফুটবলার আছেন ক্ষোভ মেটানোর অপেক্ষায়, ‘আমি বল চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা সেটা দিতে ইচ্ছুক ছিল না। এমনকি বল বয়ের কাছেও গিয়েছি, কিন্তু কেউই আমার হাতে বল দেয়নি। সেই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও ভালো করার প্রেরণা দিচ্ছে।’