টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি সংস্করণ এখনো বাংলাদেশ দলের কাছে বিরাট এক ‘গোলকধাঁধা’। যে ওয়ানডে সংস্করণে লাল-সবুজের দল ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের অন্যভাবে চিনিয়েছিল, সেটিতেও বিরাট অধঃপতন ঘটেছে শান্তদের। কাল আইসিসির বার্ষিক হালনাগাদ র্যাঙ্কিংয়ের বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আগের মতো ৯ নম্বরে থাকলেও ওয়ানডেতে তারা নেমেছে ১০-এ। ১৯ বছর পর ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে নেমেছে বাংলাদেশ।
কেন নামবে না। গত ১২ মাসে ওয়ানডে সংস্করণে বাংলাদেশ নিজেদের ‘প্রিয়’ সংস্করণে ৮ ম্যাচ খেলে ৭টিতে হেরেছে। দলটি এ সময়ে আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও বাজে ফল নিয়ে ফিরেছে। মাঠে বাজে পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়েছে আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ভালো করার পর বাংলাদেশ ওই বছর মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জিতে উঠেছিল ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ৭ নম্বরে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে বাংলাদেশ ওঠে ৬ নম্বরে, ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অবস্থান। ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর আবারও ৬ নম্বরে উঠেছিল বাংলাদেশ। এরপর নামতে নামতে এবার ১০-এ নেমে গেল। সর্বশেষ ২০০৬ সালে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে ছিল বাংলাদেশ। আইসিসির বার্ষিক হালনাগাদ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে আফগানিস্তান (৭), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৯)।
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ৫০ ওভারের ক্রিকেটের সঙ্গে বেশি অভ্যস্ত। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রধান রুটি-রুজি তাঁদের ৫০ ওভারের ক্রিকেটনির্ভর। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ থেকে শুরু করে প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ খেলে ক্রিকেটাররা পেশাদার জগতে পা রাখেন। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন, বছরের পর বছর ঘরোয়া ক্রিকেট এতটা কলুষিত হয়ে পড়েছে যে সেটির ফল হিসেবে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে এত পতন ঘটেছে বাংলাদেশের। কাল আজকের পত্রিকাকে বিসিবির এ পরিচালক বলেন, ‘এতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কারণ নেই। ২০১৫ সাল থেকে আমরা যে নির্দিষ্ট ফরম্যাটে উন্নতি করলাম। এ সংস্করণে সবাই আমাদের সমীহ করতে শুরু করল। মাত্র কয়েকটা বছর ধরে রাখার পর ধারাবাহিক খারাপ করতে শুরু করলাম। এটা কেন হয়েছে, সেটা আমরা জানি। একটা সময় বিভিন্নভাবে ক্রিকেটকে যেভাবে কলুষিত করা হয়েছে, বিশেষ করে ৫০ ওভারের ক্রিকেট, ঘরোয়া ক্রিকেট যেভাবে কলুষিত করা হয়েছে, দিন শেষে সেটার ফল এটা। ক্ষয় হতে হতে এটা এখানে এসে পৌঁছেছে।’
ফাহিম আফসোসের সুরে বলেন, ২০১৫ সালে যেসব খেলোয়াড় ছিলেন বাংলাদেশ দলে এবং পরে আরও যেসব প্রতিভাবান ক্রিকেটার যুক্ত হয়েছিলেন, তাতে পতন নয়; বরং ওয়ানডে ক্রিকেটে আরও ওপরে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। ‘২০১৫ সালে আমাদের যে শক্তি ছিল, পরে আরও অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার এসেছে। গত পাঁচ বছরে আমাদের যে বোলিং আক্রমণ তৈরি হয়েছে, আমাদের বরং সম্ভাবনা ছিল আগের চেয়ে ভালো জায়গায় পৌঁছানোর। কিন্তু আমরা সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারিনি। কারণ, আমরা সৎ-স্বচ্ছ ছিলাম না; কোনো পরিকল্পনা ও স্বপ্ন ছিল না দীর্ঘ সময়। এসব কারণে এটা হয়েছে।’ বলছিলেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান।
ফাহিম এখন যে বিভাগের প্রধান, জাতীয় দল সেটির অধীনে। বললেন, উন্নতির পথ খুঁজতে তাঁরা বসবেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভালো করতেই হবে। যে সংস্কৃতি আমাদের ক্রিকেট ধ্বংস করছে, সেই সংস্কৃতি আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। যথাযথ সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে, যেখানে সবাই দলের ভালোর জন্য, দলের জয়ের জন্য পরিশ্রম করবে। সমঝোতা করবে না, ত্যাগ স্বীকার করবে। আমাদের খেলোয়াড়দের যে মান, কোনো কারণ নেই পিছিয়ে থাকার। আমরা অবশ্যই বসব, সবচেয়ে শক্তির জায়গা ওয়ানডে। এটা পুনরুদ্ধার করতে হবে।’