বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ‘ডিটেইল প্ল্যানিং’ শুধু বিএনপির আছে, আর কোনো দলের নয়। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বিএনপির আয়োজনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির আলোচনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসুন, আমরা সকলে মিলে যদি সরকারকে সহযোগিতা করি, যে সরকার নির্বাচিত হবে এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে চাই, ইনশা আল্লাহ, জনগণের রায়ে বিএনপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে। সেই সরকারকে সফল করতে হলে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে সহযোগিতা করতে হবে।’
দেশের মানুষের স্বার্থে যেকোনো মূল্যে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘যে অন্যায় করে, সে কোনো দলের হতে পারে না। অন্যায় যে করে, সে অন্যায়কারী। কাজেই, যেকোনো মূল্যে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, কঠোর হস্তে দেশের মানুষের স্বার্থে যেকোনো মূল্যে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলাকে আমাদের ঠিক রাখতে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিএনপির কাছে নিরাপদ। দেশের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা বলেন, এটিতেও বিএনপির রেকর্ড রয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করা, এটিতেও বিএনপির রেকর্ড রয়েছে।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমরা একটি রাজনৈতিক দল। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই জনগণ আমাদের কাছে শুধু কথার ফুলঝুড়ি প্রত্যাশা করে না, কথার ফুলঝুড়ি যদি দিতে হয়, অনেক কথা আমরা বলতে পারি; কিন্তু জনগণ আমাদের কাছে প্রত্যাশা করে যে—আমরা কীভাবে দেশ পরিচালনা করব? পুরো পরিকল্পনা জনগণ আমাদের কাছে দেখতে চায়। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ‘‘ডিটেইল প্ল্যানিং’’ শুধু বিএনপির আছে, আর কোনো দলের নয়।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আজ দেশের স্বাধীনতা বলেন, সার্বভৌমত্ব বলেন, গণতন্ত্র বলেন—সবকিছু নির্ভর করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপরে। আমরা যদি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি, এই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। এই দেশকে আমরা ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে পারব। যদি আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, জনগণকে সঙ্গে রাখতে না পারি, এই দেশের অস্তিত্ব নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন দেখা দেবে। কাজেই, আপনাদেরকে এখন সজাগ হতে হবে। ঘরে বসে থাকার বিন্দুমাত্র সময় নেই, মাঠে চলে যেতে হবে, মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, পথে-প্রান্তরে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
এর আগে সকালে একই অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আজকে একটা জরিপের রিপোর্ট বের হয়েছে। সেখানে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, বেশি আসন এই নির্বাচনে কে পাবে? কোন দল? শতকরা ৬৬ জন উত্তরদাতা বলেছে বিএনপি। আর শতকরা ২৬ জন উত্তরদাতা বলেছে জামায়াতে ইসলামী। ডিফারেন্স হলো, ৪৪ ভাগ। আর অন্য যারা, তারা তো অনেক অনেক কম আরকি। এমনকি অনেক উল্লেখযোগ্য দল, তারা শতকরা এক ভাগও না। এরচেয়েও কম। এতে হতাশ হয়ে, নিরাশ হয়ে কেউ ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিতেই পারে। কিন্তু যে জনগণ তাদের মনস্থির করে ফেলেছে, তারাই ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেবে না। এটা মনে রাখতে হবে।’
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতন ও একটা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা, এই এক দফা আমরা অর্জন করেছি। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, বাকি অংশটুকু পূরণ করার জন্যই অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু এই বাংলাদেশের জনগণ মাত্র কিছুদিন আগে ১৫ বছর ধইরা সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো ঘাড়ে চেপে বসা একটা নিপীড়নকারী, একটা খুনি, একটা ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করেছে। সেই জনগণ কোনো ষড়যন্ত্র হতে দেবে না। কোনো ষড়যন্ত্র এই জনগণকে পরাজিত করতে পারেনি এবং পারবে না ইনশা আল্লাহ।’
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
তারেক রহমানের ফেসবুক পোস্ট
এদিকে আজ মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লিখেছেন, ‘দুর্নীতি কীভাবে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে—তা বুঝতে দূরে যাওয়ার দরকার নেই। মেধার ভিত্তিতে চাকরি খুঁজতে বের হওয়া একজন গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে কথা বললেই বুঝবেন। মাসের পর মাস ধরে একটি সাধারণ সরকারি সেবা পেতে হিমশিম খাওয়া কৃষকের দিকে তাকান। হাসপাতালে গিয়ে এক তরুণের পরিবার কীভাবে ভোগান্তিতে পড়ে, সেটা শুনুন। অথবা ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়া উদ্যোক্তাদের ভোগান্তি দেখুন। খাবারের দাম কেন বাড়ে, স্কুলে ভালো পড়াশোনা কেন মেলে না, রাস্তায় কেন নিরাপত্তা নেই—সবকিছুর পিছনে সেই একই কারণ—দুর্নীতি। এটা লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দমবন্ধ করে ফেলেছে।’
আগামী দিনের লড়াইয়ে বিএনপি নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তারেক রহমান লেখেন, ‘বহু বছর অব্যবস্থাপনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই কঠিন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসই প্রমাণ করে, যখন সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন একসাথে আসে, তখন পরিবর্তন অসম্ভব নয়। জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়—বিএনপি আবারও সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।’
অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশ দীর্ঘ দেড় দশক ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের কালো অধ্যায় পার করেছে, যখন মানবাধিকার সমাধিস্থ করা হয়েছিল, গণতন্ত্রকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছিল, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে নেওয়া হয়েছিল হাতের মুঠোয়। এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁরা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ছাত্র, শ্রমিক কিংবা সাধারণ মানুষ যে-ই হোন না কেন, মিথ্যা মামলা, কারাবাস, শারীরিক নির্যাতন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘মানবাধিকার দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানবাধিকার কোনো বিশেষ দিনের বিষয় নয়, এটি প্রতিদিনের মানবাধিকার হরণের প্রতি লক্ষ রাখা ও প্রতিকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা। দেশের আপামর জনগণের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাবন্দী থেকে, মিথ্যা মামলায় শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে যে নির্মম পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন, তা এক চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই অধ্যায় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কখনো থেমে থাকা উচিত নয়। ন্যায়সংগত প্রতিবাদের বিজয় অনিবার্য। বর্তমানে চিকিৎসাধীন অসুস্থ দেশনেত্রীর আশু সুস্থতা কামনা করছি।’