সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছেন কর্মচারীরা। আগামীকাল মঙ্গলবার আবার বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। দেশের সব সরকারি দপ্তরের কর্মচারীদের একই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যে গতকাল রোববার সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজ বেলা সোয়া ১১টার পর সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের পাশে বাদামতলায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মচারীরা। পরে মিছিল নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের দপ্তর ঘেরাও করতে যান তাঁরা।
পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর যে ভবনে সেই ভবনের সামনে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করার ঘোষণা দেন কর্মচারীরা। পরে সেখান থেকে সরে গিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় সচিবালয়ে প্রবেশের সবগুলো ফটক বন্ধ করে দেন কর্মচারীরা। আধা ঘণ্টা পর এসব গেট খুলে দেওয়া হয়।
এদিকে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব সংগঠনকে নিয়ে আজ নতুন ঐক্য ফোরাম গঠন করা হয়েছে। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনের নিচে ঐক্য ফোরামের নেতারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর বলেন, কর্মসূচি ততক্ষণ পর্যন্ত চলমান থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না এই কালো আইন বা অধ্যাদেশ বাতিল সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ এগিয়ে না এলে এই আন্দোলন সারা দেশে ১৮ লাখ কর্মচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। এই আইন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে চলমান কর্মসূচি সমাপ্ত হবে।
আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের বাদামতলায় সমবেত হতে কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাদিউল জানান, আজ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় বৈঠকটি হয়নি।
ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের আরেক অংশের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম জানান, সারা দেশের সব সরকারি কর্মচারী তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
এর আগে বিক্ষোভ সমাবেশে কর্মচারী নেতারা অভিযোগ করেন, যেসব কর্মচারী আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন, অনেক সচিব তাঁদের ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়েছেন।
নতুন ঐক্য ফোরাম গঠন
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আন্দোলনরত সব সংগঠনকে নিয়ে আজ বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম গঠন করা হয়েছে। সংগঠনগুলোর যৌথ আলোচনায় সর্বসম্মতিক্রমে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে ঐক্য ফোরামের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন কমিটি বাস্তবতার আলোকে ঘোষিত কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়া সমস্যা চিহ্নিত ও উদ্ঘাটন, পর্যালোচনা, পরামর্শ ও সুপারিশ প্রণয়ন এবং সরকারের যথাযথ পর্যায়ে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের আরেক অংশের সভাপতি মো. বাদিউল কবীরকে কমিটিতে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে। সচিবালয়ের তিনটি সংগঠনের মধ্য থেকে ১০ জন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন করে অন্য পদগুলো খুব শিগগির পূরণ করা হবে। পাশাপাশি প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে সাত সদস্যের সাবকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।