মনতন, ভূমধ্যসাগরের তীরে অনুচ্চ পাহাড়ের ঢালে ছবির মতো সুন্দর একটি শহর। যত দূর চোখ যায়, চারদিকে বিস্তীর্ণ ফিরোজা-নীল জলরাশি। আকাশে ছিটেফোঁটা খেয়ালি মেঘ অবারিত নীলের জৌলুশ ঢাকতে পারে না। ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বে নিছ নগরী থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার বা ১৯ মাইল দূরে, মোনাকো এবং ইতালির সীমান্তঘেঁষা এই শহরে এ সময়ে ভিড় জমায় পৃথিবীর বহু দেশের লেবুপ্রেমীরা। ‘লেবুর রাজধানী’ এই মনতনে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় পৃথিবীর একমাত্র বর্ণাঢ্য লেবু উৎসব।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে গুনে গুনে ১৫ দিন ধরে চলে জমজমাট এই উৎসব। সেই ১৯৩৪ সাল থেকে এই আন্তর্জাতিক উৎসব শুধু ফ্রান্সেই উদ্যাপিত হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। এ বছর ৮৯ বছরে পা রেখেছে মনতন শহরের এই লেবু উৎসব। এই বর্ণাঢ্য উৎসবে যোগ দিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আড়াই থেকে তিন লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে ছোট্ট শহরটিতে। এ বছর লেবু উৎসব শুরু হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি। চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ফেব্রুয়ারির শীত যাই যাই করেও খানিকটা তেজ হারিয়ে অনেকটাই নিস্তেজ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বসন্তকালীন হালকা ঠান্ডায় চারদিকে নানান দেশের, নানান বর্ণের, বিভিন্ন ভাষাভাষী উচ্ছল এবং আনন্দিত মানুষের ঢল। একটু কান পাতলে বাংলা উচ্চারণও শুনতে পাওয়া মোটেই অসম্ভব নয়। আনন্দমুখর এক পরিবেশ।ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, স্যুভেনিরের বুটিকে উপচে পড়া ভিড়। সকালের রোদ মেখে শুরু হয় অদ্ভুত ফ্যাশনের রঙিন, ঝলমলে পোশাক আর মাথায় বাহারি বনেট, কারুকার্যময় টুপিতে নর্তক-নর্তকীদের ছন্দময় নাচ। ঢোল, তাম্বুরা, বেহালা আর অ্যাকর্ডিয়নের মনমাতানো সুরের মূর্ছনায় মুহূর্তে পৌঁছে দেবে রূপকথার অলৌকিক এক জগতে।
দর্শনার্থীদের জন্য বিনা দর্শনীতে উন্মুক্ত এমন মহাযজ্ঞে শুধু শোভাযাত্রার সময় আসন সংরক্ষণের জন্য গুনতে হবে মাথাপিছু ২৯ ইউরো। তবে শিশু, কিশোর, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকদের কথা আলাদা। আবাসন, যোগাযোগ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত রাখতে কর্তৃপক্ষের চেষ্টার কোনো কমতি নেই।
প্রাচীন এবং ইতিহাসখ্যাত মনতনকে বলা হয় লেবুর রাজধানী। কারণ, উপক্রান্তীয় জলবায়ুতে লেবুর ফলন যেমন বেশি, তেমনি এখানকার লেবুর স্বাদ ও ঘ্রাণ অনেকটাই আলাদা। রসে চিনির আধিক্যের কারণে নামকরা শেফদের কাছে এই লেবু আলাদা পছন্দের।