বিপদ-আপদ, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা বলে-কয়ে আসে না। তেমনি গত ১৫ এপ্রিল অনেকটা আকস্মিকভাবে সুদানে সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়। একটি স্বাধীন দেশের দুটি বাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নিলে অবধারিতভাবে জনজীবনে অসহনীয় দুর্ভোগ নেমে আসে। ফলে সে দেশে অবস্থানরত বিদেশি বেসামরিক নাগরিকদের জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলো তৎপর হয়। সৌদি নৌবাহিনীর তিনটি বিশাল বিমান তাদের নাগরিকদের সঙ্গে ১৩৬ জন বাংলাদেশিকে আকাশপথে জেদ্দায় নিরাপদে পৌঁছে দেয়। জেদ্দা থেকে তাঁরা সবাই দেশে ফিরে এসেছেন। অন্য বহু দেশ ত্বরিত বিমান পাঠিয়ে তাদের নাগরিকদের নিরাপদে সুদান থেকে সরিয়ে নেয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল বা দেশ থেকে বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার এমন অনেক ঘটনা আছে।
বেশি দিন আগের কথা নয়। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পর বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি নাগরিক তড়িঘড়ি করে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। সে সময় মার্কিন দানবাকৃতির কার্গো বিমান সি-১৭ গ্লোবমাস্টার-৩ খুব কাজে এসেছিল। এ সময় একেকবারে বহু মানুষকে সরিয়ে নিতে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল সেই বিমান। সে ছবি তখন বিশ্বের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
ফরাসি এবং স্পেনের সেনাবাহিনী বিমান অভিযানে সি-১৩০ বিমান বেশি ব্যবহার করে থাকে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের বিমানবাহিনীতে বোয়িংয়ের একাধিক বিমান সি-১৭ গ্লোবমাস্টার যুক্ত করেছে।
তবে দুর্যোগ, দুর্ঘটনা যে বিমানবন্দরের আশপাশে ঘটবে না, তা নয়। সে দিকটি চিন্তা করে ইতালীয় মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা সংস্থা ফিনমেকানিকা রানওয়ে ছাড়া উল্লম্ব উড্ডয়ন এবং অবতরণে সক্ষম চমৎকার নকশার বিমান বাজারে ছেড়েছে। নাম এ.ডব্লিউ-৬০৯ তিলত্রোতর। বর্তমানের আকাশ ট্যাক্সিগুলো অনেকটাই এমন—অনেক দূর দৌড়ে গিয়ে আকাশে উড়তে হয় না।
১৯০৮ সালে উদ্ভাবনের বরপুত্র টমাস এডিসনকে রাইট ভাইদের বিমানের বিষয়ে মন্তব্য করতে বলা হয়। আকাশে ওড়ার আগে আকাশযানের এই লম্বা দৌড়কে তিনি মোটেই পছন্দ করেননি। তিনি জানিয়েছিলেন, উড়োজাহাজের উৎকর্ষ প্রমাণিত হবে এর উল্লম্ব উড্ডয়ন ও অবতরণে। আজ তা সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, আজ নিরাপদ এবং আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য যেমন উড়োজাহাজের বিকল্প নেই, তেমনি দুর্যোগে, দুর্বিপাকেও মানুষের প্রাণ রক্ষায় বিমানের বিকল্পও খুব কম আছে।