আসছে নতুন বছর। পুরোনো বছরের চুলের যত সমস্যা সব যেন নতুন বছরেই সমাধান হয়ে যায়. তাই তো চাইছেন? অন্ধভাবে চুলের যত্নের পণ্য কিনে হতাশ হওয়ার পর্ব শেষ করে কোন পণ্যটি আপনার চুলের জন্য আসলেই ভালো হবে, সেদিকে নজর দেওয়ার বছর হতে যাচ্ছে ২০২৬। ঘন ও স্বাস্থ্য়োজ্জ্বল চুল পেতে হলে ভালো অভ্যাস গড়ে তোলাও জরুরি। নতুন বছর হয়তো এ কথাটিই বারবার মনে করিয়ে দেবে। ২০২৬ সালে যে উপায়ে চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতে পারেন, তা দেখে নিন একনজরে।
স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকের যত্ন
মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পেরও দরকার বিশেষ যত্ন। শুধু চুলের দৈর্ঘ্য আর উজ্জ্বলতা নিয়ে ব্যস্ত না থেকে দরকার চুলের গোড়ারও যত্ন নেওয়া। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, মাথার ত্বকে ময়লা জমা হওয়া, রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া বা রোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়া চুল পড়ার অন্যতম কারণ। ২০২৫ সালে স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন বা স্ক্র্যাবিং বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আসছে বছরেও তা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কফি, চিনি বা নিমের গুঁড়া দিয়ে ঘরোয়া স্ক্র্যাব বানিয়ে খুব সহজেই স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখা যায়। স্ক্যাল্প পরিষ্কার থাকলে ঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন হয়, ফলে নতুন চুল গজানো সহজ হয়।
সঠিকভাবে তেল ম্যাসাজ
চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করার বিকল্প নেই। তবে এখনকার ট্রেন্ড অনুযায়ী সারা রাত চুলে তেল রাখার বদলে গোসলের ৩০-৬০ মিনিট আগে কুসুম গরম তেল মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে গোসলের সময় শ্যাম্পু করে ফেললেই চলে। এতে একদিকে যেমন পুষ্টি নিশ্চিত হয়, তেমনি অতিরিক্ত তেলের কারণে রোমকূপ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। নারকেল তেলের সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল বা তিলের তেলের সঙ্গে ভৃঙ্গরাজ মিশিয়ে মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।
চুলের যত্নে আমরা যত কিছুই করি না কেন, মানসিক স্বাস্থ্য যদি ঠিক রাখা না যায়, তাহলে সবই বিফলে যাবে। আমরা অনেকেই জানি না, মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব সরাসরি চুলের ওপর পড়ে। কাজের চাপ ও অন্যান্য স্ট্রেস অতিমাত্রায় ভর করলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে। এসব মানসিক চাপ কমাতে দৈনিক রুটিনে নিয়মিত হাঁটা, যোগব্যায়াম বা প্রাণায়াম যোগ করতে পারেন। পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম হচ্ছে কি না সেদিকেও নজর দিতে হবে নতুন বছরে। তাহলেই চুল থাকবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। শোভন সাহা কসমেটোলজিস্ট, শোভন মেকওভার
চুল ভালো রাখবে সঠিক খাদ্য়াভ্যাস
২০২৫ সালে আমরা একটি কঠিন সত্য শিখেছি—আপনি যতই দামি পণ্য ব্যবহার করুন না কেন, আপনার রোজকার ডায়েট যদি সঠিক না হয় তবে এর প্রভাব আপনার চুলের ওপর পড়বেই। চুল বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোটিন, আয়রন, ওমেগা-৩ এবং পেটের স্বাস্থ্য চুলের বৃদ্ধির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। খাবারের তালিকায় আমলকী, পেয়ারা, পেঁপে, কাঠবাদাম ও বিভিন্ন বীজ থাকে, তাদের চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্য়োজ্জ্বল থাকে। এ ছাড়াও মেথি ও জিরা ভেজানো পানি পান, কারিপাতার চাটনি বা কালো তিলের নাড়ু খেলে হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চলে ও চুল ভালো থাকে।
চুলে রাসায়নিক ও তাপের ব্যবহার কমানো
২০২৫ সালে অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং, খুব শক্ত করে চুল বাঁধা, প্রতিদিন শ্যাম্পু করা এবং জোরে জোরে চুল আঁচড়ানোকে ‘চুলের নীরব ঘাতক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানুষ এখন সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করা, মোটা দাঁতের কাঠের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো এবং হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে এমনিতেই চুল শুকানোর ওপর জোর দিচ্ছে। ফলে চুল ভেঙে যাওয়া রোধ হয়েছে এবং চুল লম্বায় বাড়ছে। এই অভ্যাসগুলো আগামী বছরে অব্যাহত রাখতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন চুল বিশেষজ্ঞরা।