হোম > জীবনধারা > খাবারদাবার

প্রাচীন খাবারই কি ভালো ছিল

ফিচার ডেস্ক

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

বিকেল ঘনিয়ে এসেছে বলিভিয়ার আমাজন বনের ছোট্ট গ্রাম আনাচেরে। কুঁড়েঘরের মাটির মেঝেতে ধোঁয়া ওঠা আগুনে ফুটছে কলা আর ম্যানিয়ক দিয়ে তৈরি পাতলা একধরনের পায়েস। রান্নায় ব্যস্ত আনা কুয়াতা মাইতো। কোলে দুধপানরত শিশু, পাশে দাঁড়িয়ে সাত বছরের ছেলে।

আনার স্বামী দিওনিসিও নাতে প্রতিদিনের মতো ভোরে রওনা হয়েছেন বনের দিকে। একটি রাইফেল আর শিকারি কুকুর সঙ্গে নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েছেন খাবারের সন্ধানে। একেক দিন একেক ধরনের খাবার জোটে। আজ তিনি ফিরেছেন কয়েকটি কোয়াটি আর দুটি আর্মাডিলো নিয়ে। এগুলো সবই বন্য প্রাণী। পরিবার এতেই খুশি। কারণ, মাংস খাওয়া মানেই বিশেষ দিন।

এভাবে আমাজনের গভীরে বসবাসরত চিমানে নামের আদিবাসীরা এখনো তাদের প্রাচীন জীবনযাপন চালিয়ে যাচ্ছে। বনের ফলমূল, নদীর মাছ, নিজেদের চাষ করা কলা, ম্যানিয়ক, পেঁপে, লেবু ও অন্যান্য শস্য তাদের মূল খাবার। বনে শিকার করা, নদীতে মাছ ধরা আর নানা রকম বনজ সম্পদ সংগ্রহ ও ব্যবহার করেই বেঁচে আছে এই জনগোষ্ঠী।

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

আদিম জীবন ও আধুনিক গবেষণা

চিমানে জনগোষ্ঠীর জীবনে সামান্য পরিবর্তনও এখন গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন গবেষক, বিশেষ করে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম লিওনার্ডর দল এই সম্প্রদায়ের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যের ওপর গবেষণা করছে।

গবেষকদের প্রশ্ন, আদিম খাদ্যাভ্যাস কি আধুনিক মানুষের জন্য উপযোগী? চিমানে জনগণের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসের প্রবণতা কম। কিন্তু যাঁরা শহরের বাজার থেকে তেল, চাল, চিনি বা টিনজাত খাবার কিনে খাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে এসব রোগ বাড়ছে। এমন চিত্র শুধু চিমানেদের নয়; আফ্রিকার হাদজা, কঙ্গোর পিগমি, গ্রিনল্যান্ডের ইনুয়িট কিংবা আফগানিস্তানের কিরগিজ জাতির জীবনের চিত্রটাও এমন। তাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাস যতটা প্রাকৃতিক, ততটাই স্বাস্থ্যকর।

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

আদিম খাবারের বৈচিত্র্য

বহু মানুষের ধারণা, আদিম মানুষ মানেই কেবল শিকারি—প্রধানত মাংসভোজী। কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্নকথা। প্রকৃতপক্ষে, প্রাচীন শিকারিরা অনেক সময় শিকার করতে ব্যর্থ হতো। সে সময়ে তাদের বেঁচে থাকতে হতো বনজ ফলমূল, কন্দ, বাদাম, বুনো শস্য বা গাছের শিকড়ের ওপর ভরসা করে। আফ্রিকার কুং ও হাদজা জাতির মানুষদের খাদ্যের প্রায় ৭০ শতাংশই উদ্ভিজ্জ। চিমানেরা প্রতিদিনের ক্যালরির বড় অংশ পূরণ করে কলা, ম্যানিয়ক ও অন্য শাকসবজি থেকে। তবে সুযোগ পেলে তারা অবশ্যই শিকার করা মাংস বা মাছ খেতে পছন্দ করে।

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

খাদ্যের কারণে শারীরিক বিবর্তন

গবেষকেরা বলেন, ‘তুমি যা খাও, তুমি তাই’—এই কথা আংশিক সত্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের দেহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন মানুষের দুধ হজম করার ক্ষমতা এসেছে কৃষি আবিষ্কারের পর। আবার যেসব জনগোষ্ঠী বেশি আলু ও ভাতজাতীয় খাবার খেয়েছে, তাদের লালা রসে বেশি এমাইলেজ এনজাইম পাওয়া যায়। অর্থাৎ আমাদের পূর্বপুরুষেরা কী খেত, তার ওপর আমাদের বর্তমান শারীরিক ক্ষমতা নির্ভর করে। মানুষের শরীর পরিবর্তিত হয়েছে তার খাদ্য অনুযায়ী। তাই একেক জনগোষ্ঠীর জন্য একেক রকম খাদ্য স্বাস্থ্যকর হতে পারে।

মানুষের খাদ্যবিপ্লবের মোড় ঘোরানো অধ্যায় রান্না

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইমেট বিশেষজ্ঞ রিচার্ড র‍্যাংহ্যাম মনে করেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাসে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে রান্না আবিষ্কারের পর। রান্না করলে খাবার নরম হয়, সহজে হজম হয় এবং শরীর তুলনামূলকভাবে বেশি ক্যালরি পায়। রান্না করা খাবার খেয়ে মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশ সম্ভব হয়েছে—এই তত্ত্ব নিয়ে কাজ করছেন র‍্যাংহ্যাম ও তাঁর সহকর্মীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের খাদ্য হওয়া উচিত ভারসাম্যপূর্ণ। স্থানীয় ফল, শাকসবজি, মাছ বা মাংস, শস্য এবং অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিশ্রম। হাদজা, ইনুয়িট, বাজাউ কিংবা চিমানে এসব জাতি তাদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে আছে।

এককথায়, মানুষের প্রকৃত শক্তি হলো বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন রকম খাবার খেয়ে টিকে থাকার ক্ষমতা। আমাদের খাদ্য হওয়া উচিত প্রাকৃতিক। আর প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা যায়, ততটাই দূরে থাকতে হবে।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

যে অভ্যাসগুলো খারাপ নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

বাংলার আদরে গড়া অগ্রহায়ণের পিঠাপুলি

জাপানি কারাআগে কি বিশ্বের সেরা ফ্রায়েড চিকেন

বিশ্বজুড়ে এক কাপ কফির দাম কোথায় কত

শীতের মৌসুমে শরীর উষ্ণ রাখবে ৫ খাবার

খাওয়ার অযোগ্য থেকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা খাবারগুলো

থাইল্যান্ড ভ্রমণে খাবারের মেনু রাখুন স্বাস্থ্যকর

আপনার প্রিয় খাবার যখন পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ

চিনাবাদাম কেন খাবেন

এশিয়ার সেরা ফাইন ডাইনিংয়ে ভিয়েতনামের পাঁচ রেস্তোরাঁ