হোম > চাকরি > ক্যারিয়ার পরামর্শ

পরামর্শ: স্বপ্ন যাঁদের ৪৬তম বিসিএস

নাইমুর রশিদ লিখন

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন মেধাবী ও চৌকস কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) নিয়োগ দিয়ে থাকে। সম্প্রতি ৪৬তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিসিএসের মাধ্যমে মোট ৩ হাজার ১৪০ জন ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে।আবেদন প্রক্রিয়া আজ থেকে শুরু হয়ে, চলবে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ৪৬তম বিসিএসের পদসংখ্যা, আবেদন প্রক্রিয়া, পরীক্ষা পদ্ধতিসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএস কৃষি ক্যাডার শেখ নাইমুর রশিদ লিখন। 

কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ দলকে ক্যাডার বলা হয়। সরকারের আদেশ, নিষেধ, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাই ক্যাডারদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ১৪টি সাধারণ ও ১২টি পেশাগত/ কারিগরি মিলিয়ে মোট ২৬টি ক্যাডারের সমন্বয়ে গঠিত।

সাধারণ ক্যাডার
বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারগুলো হলো— পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, আনসার, কর, শুল্ক ও আবগারি, নিরীক্ষা ও হিসাব, সমবায়, পরিবার পরিকল্পনা, খাদ্য, তথ্য, ডাক, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক এবং বাণিজ্য।

প্রফেশনাল ক্যাডার
বিসিএসের প্রফেশনাল ক্যাডারগুলো হলো—সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, বন, স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, রেলওয়ে প্রকৌশল, পশুসম্পদ, মৎস্য, কৃষি, পরিসংখ্যান, কারিগরি শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা।

সুযোগ-সুবিধা

  • স্থায়ী চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে।
  • দেশ-বিদেশে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে।
  • ক্যাডার সার্ভিসের বেশির ভাগ পদের পদোন্নতি ভালো এবং ক্যাডার কর্মকর্তারাই মন্ত্রণালয়/ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।
  •  নবম গ্রেডে বেতন, শুরুতেই একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট লাভ করেন। চাকরি শেষেও উল্লেখযোগ্য আর্থিক মূল্যের পেনশন সুবিধা পেয়ে থাকেন।
  • বেশির ভাগ ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি, আবাসন ও গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা রয়েছে। 

পরীক্ষা পদ্ধতি 
তিনটি ধাপে বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ধাপগুলো যথাক্রমে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা (২০০ নম্বর) এখানে ১০টি বিষয় থেকে ২০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রথম ধাপের পরীক্ষা হয়। সময় ২ ঘণ্টা। বিষয়গুলো হলো বাংলাদেশ (৩০), আন্তর্জাতিক (২০), বাংলা ভাষা ও সাহিত্য (৩৫), ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য (৩৫), ভূগোল (১০), বিজ্ঞান (১৫), কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি (১৫), গণিত (১৫), মানসিক দক্ষতা (১৫) এবং নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন (১০)। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় টিকতে হলে সাধারণত ১১০ থেকে ১২০-এর বেশি নম্বর পেতে হয়। তবে এই নম্বর মূল পরীক্ষায় যুক্ত হয় না।   

লিখিত পরীক্ষা

  • জেনারেল ক্যাডার পদের প্রার্থীদের জন্য মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। বাংলাদেশ বিষয়াবলি (২০০), আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি (১০০), গণিত ও মানসিক দক্ষতা (১০০), বাংলা ১ম ও ২য় পত্র (২০০), ইংরেজি (২০০) ও বিজ্ঞান (১০০)।
  • কারিগরি/পেশাগত ক্যাডারের জন্য প্রার্থীদের পরীক্ষার নম্বর বণ্টন হয়ে থাকে বাংলাদেশ (২০০), আন্তর্জাতিক (১০০), গণিত ও মানসিক দক্ষতা (১০০), বাংলা ১ম পত্র (১০০), ইংরেজি (২০০) ও স্নাতকের পঠিত বিষয় (২০০) এইভাবে।
  • উভয় ক্যাডার পদের প্রার্থীদের বাংলাদেশ বিষয়াবলি (২০০), আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি (১০০), গণিত ও মানসিক দক্ষতা (১০০), বাংলা ১ম ও ২য় পত্র (২০০), আলাদাভাবে বাংলা ১ম পত্র (১০০), ইংরেজি (২০০), বিজ্ঞান (১০০) ও স্নাতকের পঠিত বিষয়ে (২০০) পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
  • লিখিত পরীক্ষার পাস নম্বর ৫০ শতাংশ। এ পরীক্ষায় ভালো করলে ক্যাডার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। লিখিত পরীক্ষার বিস্তারিত সিলেবাস বিপিএসসির এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। 

ভাইভা (২০০ নম্বর)
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ভাইভা দিতে পারবেন। ভাইভা বোর্ডে প্রার্থীর আচার-আচরণ, একাডেমিক জ্ঞান, দেশ-বিদেশ এবং সমাজ ও রাজনৈতিক জ্ঞান, সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা, কনফিডেন্সসহ নানা বিষয় যাচাই করা হয়। ভাইভার পাস নম্বর ৫০ শতাংশ। লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট অনুকূলে থাকলে গেজেট জারি ও ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। ভাইভা পাস করেছেন, এমন প্রার্থীর শূন্যপদ সাপেক্ষে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।

৪৬তম বিসিএসের পদসংখ্যা 
এই বিসিএসে মোট ৩ হাজার ১৪০টি পদ রয়েছে। জেনারেল ক্যাডারে ৪৮৯টি পদ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ২৭৪টি পদ রয়েছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে। বিসিএস পুলিশে ৩৮টি পদ রয়েছে। টেকনিক্যাল ক্যাডারে রয়েছে ২ হাজার ৭৪টি পদ, যার মধ্যে সর্বাধিক বিসিএস স্বাস্থ্যে ১ হাজার ৬৯৮টি পদ বিদ্যমান। এ ছাড়া বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে রয়েছে মোট ৫৭৭টি পদ। 

আবেদন প্রক্রিয়া
৪৬তম বিসিএসে আবেদনের জন্য এই ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ওয়েবসাইটে গিয়ে জেনারেল ক্যাডার/কারিগরি-পেশাগত ক্যাডার/ বোথ বা উভয় ক্যাডার অপশনের মধ্য থেকে একটি বাছাই করলেই আবেদন পাতা দৃশ্যমান হবে। 

  • প্রথম ধাপ: এ পাতায় প্রার্থীর নিজের নাম, মা-বাবার নাম, জন্মতারিখ, এনআইডি, ঠিকানা, প্রার্থীর ওজন ও উচ্চতা, মোবাইল নম্বর, পরীক্ষার কেন্দ্রের নামসহ যাবতীয় তথ্য সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করতে হবে ।
  • দ্বিতীয় ধাপ: এ পাতায় প্রার্থীর এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্স তথা শিক্ষা জীবনের তথ্য পূরণ করতে হবে। ডিগ্রি পড়ুয়ারা মাস্টার্স সম্পন্ন করলে বিসিএসে আবেদন করতে পারবেন। নতুন প্রার্থীরা স্নাতকের সব লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে, কিন্তু রেজাল্ট হয়নি, এমন পরিস্থিতিতে অ্যাপিয়ার্ড হিসেবে আবেদন করতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে ভাইভাতে ডাক পেলে পরীক্ষা শুরু ও শেষের তারিখসংবলিত অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
  • তৃতীয় ধাপ: এ পাতায় ২৬টি ক্যাডার থেকে আপনার পছন্দের ক্যাডারগুলো ক্রমান্বয়ে বাছাই করতে হবে। সব ক্যাডার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিয়ে চয়েস বা নির্বাচন কাজটি শেষ করতে হবে।
  • চতুর্থ ধাপ: অ্যাপ্লিকেশন প্রিভিউ পাতায় আপনার জোগান দেওয়া সব তথ্য দেখতে পারবেন ও কোনো ভুল থাকলে সংশোধন করতে পারবেন। সব ঠিকঠাক থাকলে আবেদনকারীর (৩০০× ৩০০ পিক্সেল) সাইজের ছবি ও (৩০০×৮০ পিক্সেল) সাইজের স্বাক্ষর আপলোড করতে হবে।
  • পঞ্চম ধাপ: এ পাতায় নন-ক্যাডার পদ দৃশ্যমান হবে। প্রার্থী নিজের পছন্দমতো সতর্কতার সঙ্গে সেই পদগুলো নির্ধারণ করবেন।
  • ষষ্ঠ ধাপ: সব তথ্য জমা দেওয়ার পর আবেদনের কপি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করবেন। আবেদনপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী টেলিটক সিম থেকে ফি জমা দিলে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পাবেন এবং আপনার ৪৬তম বিসিএসে আবেদন কার্যক্রম শেষ হবে। 

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

পড়াশোনার পাশাপাশি জাপানে চাকরির সুযোগ

যেমন হবে বার কাউন্সিল প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি

ক্যারিয়ারে অগ্রগতির বড় শক্তি নেটওয়ার্কিং

মেডিকেল ভর্তি: প্রস্তুতির সঠিক কৌশল

চাকরিপ্রার্থীদের শেখার আগ্রহ থাকতে হবে

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শুরুর ৫ ধাপ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও বিসিএস দিলেন?

আইনে পড়ার ভবিষ্যৎ

প্রথমবার টিম লিডার হলে যেভাবে সহকর্মীদের সামলাবেন

বিসিএসের নমুনা ভাইভা: সিভিল সার্ভেন্ট কারা?