হোম > চাকরি > ক্যারিয়ার পরামর্শ

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রিলি পরীক্ষার প্রস্তুতি

আনিসুল ইসলাম নাঈম

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ পদের আবেদন শেষ হলো কয়েক দিন আগে। এবার প্রস্তুতি নেওয়ার পালা। ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় তিনটি ধাপের মধ্যে প্রিলিমিনারিতেই প্রতিযোগিতাটা সবচেয়ে বেশি।

লক্ষাধিকের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলেই লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি নিয়ে আজকের এই লেখা।

পরীক্ষা যেভাবে
ব্যাংক প্রিলিমিনারিতে ৮০ বা ১০০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন আসে ইংরেজি, বাংলা দ্বিতীয়, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান অংশ থেকে। এ ছাড়া কম্পিউটার থেকে প্রায় ১০টির মতো প্রশ্ন আসে। সব প্রশ্নের উত্তর করতে হয় এক ঘণ্টার মধ্যে। সীমিত সময়ের মধ্যে কম-বেশি সব বিষয়ে ভালো নম্বর নিশ্চিত করতে হয়।

বাংলা
বাংলা থেকে প্রশ্ন আসে ২০-২৫টি। তবে বেশির ভাগ প্রশ্ন আসে বাংলা দ্বিতীয় পত্র অংশ থেকে। সর্বোচ্চ ৬/৭টি প্রশ্ন আসতে পারে বাংলা সাহিত্য থেকে। সাহিত্যের অল্পসংখ্যক প্রশ্নের উত্তর করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের সম্পর্কে পড়লেই মোটামুটি যথেষ্ট। যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মীর মশাররফ হোসেন, শামসুর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক, জীবনানন্দ দাশ, জসিমউদ্দীন ইত্যাদি। পাশাপাশি পিএসসির নেওয়া গত কয়েক বছরের পরীক্ষার বাংলা প্রশ্নগুলো দেখে নিতে হবে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের জন্য ব্যাকরণ এবং বিরচন দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য ৯ম-১০ম শ্রেণির ব্যাকরণ বই এবং সঙ্গে বাজারের ভালোমানের একটি ব্যাকরণ বই আগাগোড়া শেষ করতে হবে। তবে সন্ধি, সমাস, কারক ও বিভক্তি, উপসর্গ, সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, বাক্য সংকোচন, এককথায় প্রকাশ, বাগধারা ইত্যাদি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ইংরেজি
ইংরেজি থেকে প্রশ্ন আসে ২৫টি। তবে ইংরেজি সাহিত্য থেকে কখনো কখনো ২/১টি প্রশ্ন আসে বা একেবারেই আসে না। সাম্প্রতিক বিসিএসের প্রশ্নগুলো দেখে নিলেই সাহিত্যের জন্য যথেষ্ট অথবা ইংরেজি সাহিত্য পুরোপুরি বাদ দিলেও খুব বেশি সমস্যা নেই। ইংরেজির জন্য ভোকাবুলারি এবং গ্রামার দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় অর্ধেক প্রশ্নই আসে Synonym, Antonym, Analogy, One word substitution, Spelling থেকে। ভালো ভোকাবুলারি জানা থাকলে দুই-তিন মিনিটেই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর করা যায়। এ ছাড়া গ্রামার অংশের উত্তর করতেও ভোকাবুলারি সহায়ক। এ জন্য প্রতিদিন অন্তত ২০টি ভোকাবুলারি পড়ার অভ্যাস করতে হবে। নতুন শব্দ সামনে পেলেই লিখে রাখতে হবে। গ্রামার অংশের জন্য Phrases and Idioms, Voice, Narration, Translation, Right form of verbs, Subject-verb agreement, Pin point error, Sentence Correction and Completion ইত্যাদি টপিক থেকে অনুশীলন করতে হবে। প্রায় প্রতিটি টপিক থেকেই ২/১টি প্রশ্ন আসে।

গণিত
ব্যাংক প্রিলিমিনারি পাসের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ গণিত। গণিতে ভালো করতে পারলে খুব সহজেই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু এই অংশেই বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীর ভীতি সবচেয়ে বেশি থাকে। কেননা পরীক্ষায় খুব অল্প সময়ে ২০টির মতো গণিত সমাধান করতে হয়। সময় পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের মতো। এই অংশে ভালো করার জন্য দ্রুত গণিত সমাধান অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। ব্যাংক প্রশ্ন যেহেতু ইংরেজিতেই হয় তাই গণিতের ইংরেজি টার্মগুলো জানা থাকা আবশ্যক। এ ছাড়া পরীক্ষায় যেহেতু ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যায় না, তাই ক্যালকুলেটর ছাড়াই হিসেব করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেকোনো টপিক থেকে যেকোনো ধরনের অঙ্ক আসতে পারে। তবে গড়, ঐকিক নিয়ম, লসাগু-গসাগু, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সুদকষা, পরিমাপ, সময় ও দূরত্ব, অনুপাত, ভগ্নাংশ, ধারা, সম্ভাবনা, ক্ষেত্রফল, বিন্যাস-সমাবেশ ইত্যাদি টপিক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে ২০টি। এই অংশের নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। দেশ-বিদেশে যা কিছু ঘটছে সব বিষয়ে নিজের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। তবে ব্যাংক প্রিলিমিনারিতে সাম্প্রতিক থেকে তুলনামূলক বেশি প্রশ্ন আসে। তাই কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সসহ অন্যান্য সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের বই নিয়মিত পড়ে শেষ করতে হবে। এ ছাড়া কিছু মৌলিক বিষয় যেমন- বাংলাদেশের ইতিহাস, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, বাজেট, জনশুমারি, মুদ্রা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সম্মেলন, পুরস্কার, খেলাধুলা, ভৌগোলিক বিষয় ইত্যাদি থেকে প্রায় সব সময় প্রশ্ন আসে।

বিজ্ঞান-আইসিটি
এখান থেকে মোট ১০টি প্রশ্ন আসে। বিজ্ঞান থেকে আসা ২/১টি প্রশ্ন বাদে বাকি সব প্রশ্ন আসে কম্পিউটার ও যোগাযোগ প্রযুক্তি থেকে। নির্দিষ্ট কিছু টপিক ভালোভাবে পড়লে বেশির ভাগ প্রশ্ন উত্তর করা যায়। যেমন- ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস, ওয়ার্ড শর্টকাট, এক্সেল শর্টকাট, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার, প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্ক ইত্যাদি। তবে আরও ভালো প্রস্তুতির জন্য বাজারের যেকোনো একটি কম্পিউটার বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ সব টপিক দেখতে হবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা

  • সবার আগে বিগত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখে প্রশ্নের প্যাটার্ন বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। কোন টপিকে বেশি জোর দিতে হবে এবং কোন টপিক বাদ দিলেও চলবে তা বুঝতে হবে।
  • প্রশ্নকারীদের প্রশ্নের সবচেয়ে ভালো উৎস বিসিএসসহ পিএসসির নেওয়া বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন। তাই বিসিএসের সব প্রশ্ন ভালোভাবে পড়ে ফেলতে হবে।
  • যত বেশি সম্ভব মডেল টেস্ট দিতে হবে এবং রিসেন্ট জব সলিউশন পড়তে হবে।
  • যেকোনো বিষয় একবার যত ভালোভাবেই পড়া হোক না কেন, তা মনে রাখা কঠিন। তাই সবকিছু একাধিকবার রিভাইজ করতে হবে।
  • গণিত অবশ্যই ভালোভাবে বুঝে অনুশীলন করতে হবে। সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মের মধ্যে আটকে থাকলে অল্প সময়ে গণিত উত্তর করা কঠিন হয়ে যায়। তাই যেমন অঙ্কই আসুক না কেন, তা বিভিন্নভাবে চিন্তা করে সমাধান করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

 অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

পড়াশোনার পাশাপাশি জাপানে চাকরির সুযোগ

যেমন হবে বার কাউন্সিল প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি

ক্যারিয়ারে অগ্রগতির বড় শক্তি নেটওয়ার্কিং

মেডিকেল ভর্তি: প্রস্তুতির সঠিক কৌশল

চাকরিপ্রার্থীদের শেখার আগ্রহ থাকতে হবে

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শুরুর ৫ ধাপ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও বিসিএস দিলেন?

আইনে পড়ার ভবিষ্যৎ

প্রথমবার টিম লিডার হলে যেভাবে সহকর্মীদের সামলাবেন

বিসিএসের নমুনা ভাইভা: সিভিল সার্ভেন্ট কারা?