হোম > চাকরি > ক্যারিয়ার পরামর্শ

বার কাউন্সিল পরীক্ষায় ড্রাফটিং প্রস্তুতি যেভাবে

মুহাম্মদ রবিন

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট ও ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। গত বছরের পরীক্ষায় ড্রাফটিং অংশের গুরুত্ব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। এই পরীক্ষায় ভালো করতে হলে শুধু আইনি জ্ঞানই নয়; বরং সেই জ্ঞানকে সঠিকভাবে প্রয়োগ এবং পরীক্ষার পরিবেশে কার্যকরভাবে উপস্থাপনার দক্ষতা থাকা জরুরি।

পরীক্ষার সিলেবাস ও প্রস্তুতি কৌশল

১. সিলেবাস ও প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ পরীক্ষার সিলেবাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়ন করুন। কোন কোন বিষয় থেকে প্রশ্ন আসছে, নম্বর বণ্টন কেমন এবং কোন বিষয়ে বেশি জোর দিতে হবে—তা চিহ্নিত করুন। সাধারণত ড্রাফটিং অংশ মূল আইনি প্রশ্নের সঙ্গে উপপ্রশ্ন হিসেবে আসে। বিগত ৫-১০ বছরের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করুন। যেমন: আরজি, নিষেধাজ্ঞার আবেদন বা জামিনের আবেদন। প্রতিটি বিষয়ের সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করুন এবং সহজে মনে রাখার জন্য ডায়াগ্রাম, ফ্লোচার্ট বা টেবিল ব্যবহার করুন।

২. আইনের মৌলিক ধারণা ও সাম্প্রতিক জ্ঞান

দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি, সাক্ষ্য আইন, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, তামাদি আইনসহ প্রতিটি আইনের মৌলিক নীতি, উদ্দেশ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো গভীরভাবে বুঝুন। শুধু মুখস্থ নয়, এর অন্তর্নিহিত অর্থ এবং বাস্তব প্রয়োগ অনুধাবন করুন। এতে আপনি আইনি সমস্যা চিহ্নিত করতে এবং আইন প্রয়োগে সক্ষম হবেন। এ ছাড়া, সাম্প্রতিক আইন ও সংশোধনী সম্পর্কে জেনে নিন। সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ কেস আইন ও রায়গুলো পড়ুন।

ড্রাফটিং দক্ষতা বৃদ্ধি ও লেখার অনুশীলন

১. নিয়মিত লেখার অনুশীলন

পরীক্ষার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো নির্ধারিত সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর লেখা। তাই নিয়মিত লেখার অনুশীলন করুন। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য সময় বরাদ্দ করে লেখার অভ্যাস করুন, যাতে পরীক্ষায় সময় ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা না হয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে উত্তর লেখার অভ্যাস করলে ৪ ঘণ্টার পরীক্ষায় সময় ব্যবস্থাপনায় আপনি দক্ষ হয়ে উঠবেন।

২. ড্রাফটিং অংশে দক্ষতা অর্জন

আরজি, হলফনামা, লিখিত জবাব, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন, ফৌজদারি নালিশ, জামিনের আবেদন এবং পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ—এই সবকিছুর ফরম্যাট শিখুন এবং নিয়মিত ড্রাফটিং অনুশীলন করুন।

৩. পরিষ্কার উপস্থাপনা ও নির্ভুল ভাষা

পরিষ্কার হাতের লেখা, শিরোনাম, অনুচ্ছেদ এবং যৌক্তিক গঠন ব্যবহার করুন। ড্রাফটিংয়ে শিরোনাম, পক্ষগণ, তফসিল, মূল্যায়ন, সত্যায়ন এবং প্রার্থনা স্পষ্টভাবে লিখুন। আইনি দলিল বা উত্তর লেখার সময় স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং নির্ভুল আইনি পরিভাষা ব্যবহার করুন। ভুল শব্দ বা অস্পষ্ট বাক্য পরিহার করুন। বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই আপনার আইনি শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করুন। উত্তর লেখার সময় প্রাসঙ্গিক আইন ও ধারার রেফারেন্স দিন।

৪. সাধারণ ভুল এড়ানো

পরীক্ষার খাতায় অযথা ভুল করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন: বানান ভুল, ব্যাকরণগত ভুল, হাতের লেখা অস্পষ্ট হওয়া, অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দেওয়া বা প্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দেওয়া। ড্রাফটিংয়ে তফসিল, মূল্যায়ন, সত্যায়ন বা প্রার্থনা বাদ দেবেন না। ভুল ফোরাম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকুন। (যেমন: দেওয়ানি মামলার জন্য হাইকোর্ট)। উত্তর লেখা শেষে ৫-১০ মিনিট সংশোধনের জন্য রাখুন।

৫. ড্রাফটিংয়ে ব্যবহৃত সাধারণ দাবি ও প্রতিরক্ষার ভিত্তিআরজি, লিখিত জবাব, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন, জামিনের আবেদন, ফৌজদারি নালিশ এবং পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগে ব্যবহৃত সাধারণ দাবি ও প্রতিরক্ষার ভিত্তি সম্পর্কে ধারণা রাখুন।

আরজিতে: বাদীকে স্বত্বের দাবি, জালিয়াতি, অবৈধ দখলচ্যুতি, জাল দলিল বাতিল এবং কারণ উদ্ভবের তারিখ উল্লেখ করে আদালতের এখতিয়ার নিশ্চিত করতে হয়।

লিখিত জবাবে: বিবাদীকে অভিযোগ অস্বীকার, মামলার অগ্রহণযোগ্যতা, তামাদি, এস্টপেল, বৈধ মালিকানা বা প্রমাণের অভাব উত্থাপন করতে হয়।

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞায়: আপাতদৃষ্ট প্রতীয়মান মামলা, সুবিধা-অসুবিধার ভারসাম্য, অপূরণীয় ক্ষতি এবং জরুরি প্রয়োজন উল্লেখ করা হয়।

জামিনের আবেদনে: আসামির নির্দোষতা, প্রমাণের অভাব, অ্যালিবাই এবং পলায়নের ঝুঁকির অভাব উত্থাপিত হয়।

অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি

১. প্রস্তুতির সংস্থান ও মক টেস্ট

নিয়মিত রিভিশন দিন এবং সম্ভব হলে মক টেস্টে অংশগ্রহণ করুন। এটি পরীক্ষার পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হতে এবং আপনার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে সহায়ক। ড্রাফটিংয়ের জন্য বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান রচিত ‘লিগ্যাল ড্রাফটিং, কনভেয়্যান্সিং এবং প্রফেশনাল এথিকস্’ এবং Mogha’s Law of Pleadings in India with Precedents বইগুলো সহায়ক হতে পারে।

২. ফিডব্যাক গ্রহণ

শিক্ষক, অভিজ্ঞ আইনজীবী বা সহপাঠীদের কাছ থেকে আপনার উত্তরপত্র বা ড্রাফটিংয়ের ফিডব্যাক নিন। ফিডব্যাকের ভিত্তিতে ফরম্যাট, ভাষা বা আইনি যুক্তির উন্নতি করুন।

৩. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা

পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। পরীক্ষার আগে টেনশন না করে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। ইতিবাচক মানসিকতা, ধৈর্য ও অধ্যবসায় সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।

৪. আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়

নিয়মিত প্রস্তুতি এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। পরীক্ষার দিন নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিন। কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক প্রস্তুতি আপনার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। প্রতিদিন ছোট লক্ষ্য পূরণে মনোযোগ দিন এবং ব্যর্থতার ভয় এড়ান।

অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার

উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি চাকরির সুযোগ আছে জাপানে

যেমন হবে বার কাউন্সিল প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি

ক্যারিয়ারে অগ্রগতির বড় শক্তি নেটওয়ার্কিং

মেডিকেল ভর্তি: প্রস্তুতির সঠিক কৌশল

চাকরিপ্রার্থীদের শেখার আগ্রহ থাকতে হবে

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শুরুর ৫ ধাপ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও বিসিএস দিলেন?

আইনে পড়ার ভবিষ্যৎ

প্রথমবার টিম লিডার হলে যেভাবে সহকর্মীদের সামলাবেন

বিসিএসের নমুনা ভাইভা: সিভিল সার্ভেন্ট কারা?