বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষা খুব প্রতিযোগিতামূলক। এ পরীক্ষায় ভালো করতে চাইলে আবশ্যিক বিষয়ের পাশাপাশি ঐচ্ছিক আইনেও সমান মনোযোগ দিতে হবে। অনেক পরীক্ষার্থী আবশ্যিক বিষয়গুলোতে গভীর প্রস্তুতি নিলেও ঐচ্ছিক আইন নিয়ে প্রায়ই দ্বিধায় পড়েন। অথচ ঐচ্ছিক আইনে ঠিকঠাক প্রস্তুতি থাকলে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় এগিয়ে থাকা যায়। কীভাবে ঐচ্ছিক আইনে ভালো ফল করা সম্ভব, সেই অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ জানালেন মেধাক্রমে চতুর্থ স্থান অর্জনকারী সহকারী জজ (সুপারিশপ্রাপ্ত) তানজিলা আকতার। লিখেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার।
বিজেএস পরীক্ষায় ৯টি আবশ্যিক বিষয়ের পাশাপাশি থাকে একটি ঐচ্ছিক বিষয়। আবেদন করার সময় পরীক্ষার্থীদের ঐচ্ছিক ১ বা ঐচ্ছিক ২, এ দুটির মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়। প্রিলিমিনারিতে উভয় ঐচ্ছিকের সব আইন থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। তবে কেউ ঐচ্ছিক ১ বেছে নিলে তাঁকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষার সময় ঐচ্ছিক ১-এর আইনগুলোর ওপর লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৌশল
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
প্রিলিতে পড়া বিষয়গুলো রিভিশনের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য অনুসন্ধান ও তদন্তের প্রক্রিয়া, আদালত বা ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি এবং বিচারের ধাপগুলো পড়া যেতে পারে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। নতুন কোনো সংশোধনী এলে তার কারণ, দর্শন ও উপকারিতা ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নোট করে রাখতে হবে।
লিখিত পরীক্ষার ভাষা
ঐচ্ছিক আইনগুলো মূলত বাংলায় লেখা থাকলেও ইংরেজিতেও পরীক্ষা দেওয়া যায়। ভাষানির্বিশেষে নম্বরপ্রাপ্তিতে কোনো পার্থক্য হয় না। যে ভাষাতেই লিখুন, উত্তর হতে হবে তথ্যসমৃদ্ধ এবং প্রশ্নের সব দিক স্পর্শ করতে হবে। প্রশ্নের মূল চাহিদা না মেনে অপ্রয়োজনীয় বিস্তারিত লিখলে নম্বর পাওয়া যায় না। তাই সময় নিয়ে প্রশ্ন বুঝে উত্তর দেওয়া জরুরি।
প্রবলেমেটিক, না ব্যাখ্যামূলক উত্তর
বিশেষ আইনে ১০ নম্বরের প্রবলেম প্রশ্নে অনেক ধারা উল্লেখ করতে হয়। যদি সব ধারা মনে না থাকে, তবে প্রবলেমেটিক উত্তর না দিয়ে ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন বেছে নেওয়া ভালো। স্মার্টভাবে লিখলে ব্যাখ্যামূলক উত্তরও আধা ভুল উত্তর থেকে অনেক বেশি নম্বর দেয়। তাই নোট ও ব্যাখ্যামূলক উত্তর দেওয়ায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
যাঁরা প্রথমবার বিজেএস দেবেন, ছোট আকারের বিশেষ আইন দিয়ে শুরু করুন। যেমন ক্রিমিনাল ‘ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৫৮। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং ভয় কমে যাবে। শুরু থেকে প্রিলিমিনারিভিত্তিক নোট করলে পরবর্তী সময়ে সুবিধা হবে।
শেষ মুহূর্তের রিভিশন
পরীক্ষার আগের রাতে সব আইন রিভিশন সম্ভব নয়। তবে বিশেষ আইনে অবশ্যই শেষ মুহূর্তে একবার দেখে নিতে হবে। কারণ এগুলোতে প্রচুর সংজ্ঞা, ধারা ও সময়সীমা মনে রাখতে হয়। ছোট ও তথ্যসমৃদ্ধ আইনগুলো নোট রাখুন। এটি আপনার রিভিশনে সময় কম লাগবে।
বিশেষ আইন আগে থেকে পড়া হয় না বলেই বিজেএস প্রস্তুতির শুরু থেকে এগুলোকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আর বারবার রিভিশনের বিকল্প নেই। যতবার রিভিশন দেবেন, তত বেশি আত্মবিশ্বাসী হবেন এবং নম্বরও পাবেন।