মানব সমাজে শান্তি ও ভারসাম্য বজায় রাখতে ইসলাম দুটি মূল দায়িত্ব নির্ধারণ করেছে—১. হক্কুল্লাহ (আল্লাহর অধিকার), ২. হক্কুল ইবাদ (বান্দার অধিকার)।
অনেকেই ভাবেন, আল্লাহর হক আদায় করলেই পরকালীন সফলতা মিলবে। অথচ ইসলামি শিক্ষায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে—বান্দার হক নষ্টকারী প্রকৃত মুমিন নয়, বরং সে মিথ্যাবাদী ও জুলুমকারী।
বান্দার হক কী
বান্দার হক বলতে এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি অপর ব্যক্তি বা সমাজের দায়িত্ব, অধিকার ও ন্যায়ের দাবি বোঝানো হয়। এটি শুধু সামাজিক অনুশাসন নয়, বরং শরিয়তের কঠিন ফরজগুলোর অন্তর্ভুক্ত।
কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে—
১. পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা মানুষের হক কম দেয়, ধ্বংস তাদের জন্য। (সুরা মুতাফফিফিন: ১–৩)
২. নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা জানো কে মুফলিস (দেউলিয়া) ? সে ব্যক্তি, যে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ অনেক আমল নিয়ে পরকালে হাজির হবে, অথচ কাউকে গালি দিয়েছে, কারও অপমান করেছে, কারও সম্পদ খেয়েছে, কারও রক্ত ঝরিয়েছে। তখন তার নেক আমল ভুক্তভোগীদের দেওয়া হবে। শেষে যদি আমল ফুরিয়ে যায়, তবে তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহিহ্ মুসলিম: ২৫৮১)
যেসব ক্ষেত্রে বান্দার হক লঙ্ঘিত হয়—
১. মাল ও সম্পদের হক: চুরি, সুদ, প্রতারণা, মজুতদারি ও জবরদখল।
২. সম্মান ও ইজ্জতের হক: গিবত, অপবাদ, গালাগাল, সামাজিকভাবে হেয় করা।
৩. আচরণগত হক: অসদাচরণ, স্বজনপ্রীতি, অবিচার, অহংকার, সহানুভূতির অভাব।
৪. সম্পর্কের হক: পিতামাতা, স্ত্রী-সন্তান, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের প্রতি অবহেলা।
বান্দার হক ফেরত না দিলে কী হয়
মানুষের হক নষ্ট করে কেউ যদি ইন্তেকাল করে, সে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বহন করে মারা যায়। পরকালে সেই হক আদায় করা হবে নেক আমল থেকে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, কিন্তু বান্দার হক নিয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না—তখন সেই হকের দাবি অন্য বান্দাকেই দিতে হবে।
করণীয়
ইসলামের দৃষ্টিতে বান্দার হক আদায় না করলে শুধু দুনিয়ার শাস্তি নয়, বরং পরকালের ভয়াবহ বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। তাই সৎ মুসলমান শুধু নামাজে নয়, তার প্রতিটি কাজে অন্যের অধিকার রক্ষা করে।
আসুন, আল্লাহর হক যেমন আদায় করি, তেমনি তাঁর বান্দার অধিকারও ন্যায় ও ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করি।
লেখক: আনওয়ার হুসাইন
শিক্ষক, মা’হাদুল মাদীনাহ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
লেখক ও সম্পাদক, মাকতাবাতুত তাকওয়া, ঢাকা।