বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের শেষ জীবিত সন্তান প্যাট্রিক হেমিংওয়ে ৯৭ বছর বয়সে মারা গেছেন। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানার বোজম্যান শহরে নিজ বাসায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর নাতি অ্যাডামস।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, প্যাট্রিক ছিলেন হেমিংওয়ের দ্বিতীয় ছেলে। শৈশবে বাবার ভ্রমণপিপাসু জীবনধারার কারণে তিনি কিউবা, স্পেন, ওয়াইওমিং থেকে শুরু করে ফ্লোরিডার কি ওয়েস্ট পর্যন্ত নানা জায়গায় বড় হয়েছেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে আফ্রিকার তানজানিয়ায় বসতি গড়েন। সেখানে তিনি চাষাবাদ, সাফারি গাইড, শিক্ষকতা ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় বনবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন।
নোবেলজয়ী বাবার অনুপ্রেরণায় প্যাট্রিক নিজেও লেখালেখি ও সম্পাদনার কাজে যুক্ত হন। তাঁর সবচেয়ে বড় উদ্যোগ ছিল ‘ট্রু অ্যাট ফার্স্ট লাইট’ গ্রন্থটি সম্পাদনা করা। আফ্রিকায় আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সময়কাল নিয়ে লেখা এই অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি থেকে ১৯৯৯ সালে একটি সংস্করণ প্রকাশ করেন প্যাট্রিক। তবে সমালোচকদের অনেকে মনে করেন, বইটি পরিবারের খ্যাতিকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা ছিল।
প্যাট্রিক হেমিংওয়ে ছিলেন বাবার সাহিত্য-সম্পদের একজন নির্বাহক। তাঁর অনুমোদনেই পুনর্মুদ্রিত হয়েছে ‘অ্যা ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’ ও ‘অ্যা মুভেবল ফিস্ট’ এর মতো ক্ল্যাসিক রচনা। একই সঙ্গে বিতর্কিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে হেমিংওয়ের স্মারক বহন করা বিভিন্ন পণ্য—যেমন পোশাক, চশমা, গৃহসজ্জা সামগ্রী ও ‘পাপাস পিলার রাম’ নামে মদ।
ব্যক্তিগত জীবনে প্যাট্রিক ছিলেন উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত এক চরিত্র। নাতি অ্যাডামস তাঁকে ‘স্বপ্নবাজ অথচ বৈজ্ঞানিক মস্তিষ্কসম্পন্ন, শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এক মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি দুইবার বিয়ে করেন এবং প্রথম স্ত্রী হেনরিয়েটা ব্রয়েলসের সঙ্গে তাঁর একমাত্র কন্যা মিনা হেমিংওয়ের জন্ম।
আর্নেস্ট হেমিংওয়ের পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক অসুস্থতা ও আত্মহত্যার ইতিহাস রয়েছে। লেখক নিজে ১৯৬১ সালে আত্মহত্যা করেন, অন্যদিকে প্যাট্রিকের ভাই গ্রেগরি জটিল মানসিক সমস্যায় ভুগে ২০০১ সালে মারা যান। তবুও প্যাট্রিক দীর্ঘ জীবন কাটিয়েছেন এবং পরিবারের উত্তরাধিকারের দায়িত্ব সামলেছেন।
২০০৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে প্যাট্রিক স্মৃতিচারণা করে বলেছিলেন, ‘আমি বাবাকে জীবনের প্রতিটি স্তরে মনে রাখি—শৈশবে তাঁর রুক্ষ দাঁড়ি-মুখে চুমু খাওয়া বিরক্তিকর লাগত, আবার আফ্রিকায় রাতের বেলা ঘোড়ায় চড়ে একসঙ্গে সময় কাটানো ছিল আনন্দময়।’