হোম > বিশ্ব > পাকিস্তান

ইমরান খানের দুর্ভাগ্যের সঙ্গী ও তৃতীয় স্ত্রী—কে এই বুশরা বিবি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বিয়ে করার আগে তাঁর তৃতীয় স্ত্রীর নাম ছিল বুশরা মানেকা। বর্তমানে তিনি বুশরা বিবি নামেই বেশি পরিচিত। ইমরান খানের আগের দুই স্ত্রী ছিলেন যথাক্রমে ব্রিটিশ অভিজাত জেমিমা গোল্ডস্মিথ ও সাংবাদিক রেহেম খান। 

বুশরা বিবির প্রসঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরান খানের আগের দুই স্ত্রীর সঙ্গে তুলনা করলে বুশরা ছিলেন একেবারেই ব্যতিক্রম। কারণ, জেমিমা ও রেহেম খান দুজনই ছিলেন সুপরিচিত মুখ। বিশ্বের নামীদামি বিভিন্ন ম্যাগাজিনের কভারে ঠাঁই হয়েছে তাঁদের। টেলিভিশনেও নিয়মিত দেখা যায় এই দুজনকে। আর বুশরা বিবির মুখই দেখা যায় না। হিজাব কিংবা ওড়নার আড়ালে লুকিয়ে থেকে তিনি আজও এক রহস্যময় নারী। 

২০১৮ সালে দ্য মেইল অন সানডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান দাবি করেছিলেন, বিয়ের আগে তিনি এক পলকের জন্যও বুশরা বিবির মুখ দেখেননি। আশির দশকের শেষদিকে লন্ডনের নাইটক্লাব দাপিয়ে বেড়ানো ইমরান খানের জন্য বিষয়টি ‘অকল্পনীয়ই’ বটে। 

ইমরান খান জানিয়েছিলেন, বুশরা বিবির বুদ্ধিবৃত্তি এবং চরিত্রই তাঁকে তাঁর কাছে টেনে নিয়েছিল। বুশরাকে রহস্যময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবেও কৃতিত্ব দেন ইমরান। বিশ্বাস নিরাময়কারী হিসেবে বুশরা বিবির কিছু অনুসারীও আছেন, যারা তাঁকে তাঁদের আধ্যাত্মিক পরামর্শক হিসেবে সম্মান করেন। 

গতকাল বুধবার বুশরা ও ইমরান খান দম্পতিকে দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন পাকিস্তানের আদালত। পাশাপাশি দুজনকে আলাদাভাবে ২০ লাখ ডলার করে জরিমানা করা হয়েছে। এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ বুশরা বিবি সম্পর্কে জানতে তাঁর নামে গুগলে সার্চ দিতে শুরু করে। 

কেউ কেউ বলেন, সুফি ঐতিহ্যের সঙ্গে বুশরা বিবির নিবিড় যোগসূত্র আছে। যদিও এই দাবি নিয়েও অনেক বিতর্ক রয়েছে। সুফিবাদকে প্রায় সময়ই ইসলামিক আধ্যাত্মবাদ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। বুশরার স্বামী ইমরান খানের বক্তব্য অনুযায়ী, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই বিষয়ে আগ্রহী। এর মাধ্যমে মূলত নিজ অন্তরে সৃষ্টিকর্তার অনুসন্ধান এবং পার্থিব বিষয় ত্যাগের ওপর জোর দেওয়া হয়। 

তিন দশক আগের জীবনে ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে সব সময় লাইমলাইটে থাকা ইমরান খানের একটি প্লেবয় ইমেজ ছিল। ১৯৯৫ সালে ৪৩ বছর বয়সে তিনি পৃথিবীর অন্যতম ধনী এক বাবার কন্যা ব্রিটিশ সুন্দরী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেছিলেন। এই বিয়ে ৯ বছর টিকেছিল এবং তাঁদের দুই পুত্রের জন্ম হয়েছিল। 

ইমরান খান দ্বিতীয় বিয়েটি করেন ২০১৫ সালে বিবিসির আবহাওয়াবিষয়ক খবরের উপস্থাপিকা ও সাংবাদিক রেহেম খানকে। তবে এ বিয়েটি এক বছরেরও কম সময় টিকেছিল। রেহেমের অভিযোগ ছিল, ইমরানের সমর্থকেরা তাঁকে মেনে নিতে পারেনি। 

এরপরই আসে বুশরা বিবির অধ্যায়। ২০১৮ সালে খুব সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ইমরান খান তাঁকে বিয়ে করেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসলামের প্রতি হঠাৎ দরদি হয়ে ওঠা ইমরান খান ও বুশরা বিবির জুটিটি বেশ ভালোই চলছিল। 

কথিত আছে যে ত্রয়োদশ শতকের একটি সুফি মাজারে গিয়ে সাক্ষাৎ হওয়ার পরই পাঁচ সন্তানের জননী বুশরার কাছে বিভিন্ন পরামর্শের জন্য যেতেন ইমরান খান। বুশরা তখনো তাঁর প্রথম স্বামীর ঘর করছিলেন। 

আরও শোনা যায়—এক রাতে বুশরা বিবি স্বপ্ন দেখেন, একটি মাত্র উপায়েই ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, যদি তাঁরা বিয়ে করেন। ঐশী বিশ্বাসের ওপর আস্থা রেখেই তাঁরা বিয়ে করেন এবং ছয় মাস পরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান। তবে ২০১৮ সালের অক্টোবরে দেওয়া এখন পর্যন্ত একমাত্র টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সেই গল্পটি উড়িয়ে দিয়েছিলেন বর্তমানে বয়স চল্লিশের কোঠায় থাকা বুশরা বিবি। তবে তিনি এটা বলেছিলেন, ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান দ্রুত উন্নতি লাভ করবে। 

বুশরার সেই কথা শেষ পর্যন্ত ফলেনি। কারণ, ইমরান প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের অর্থনীতিতে ধস নেমেছিল, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি বেশ কিছু বিরোধী রাজনীতিবিদকেও জেলে ঢুকিয়েছিলেন ইমরান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় লাগাম টেনেছিলেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছিল তাঁর আমলে। 

রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রকাশ্যে উদারতাবাদকে সমর্থন করে সাফল্য পেয়েছিলেন ইমরান খান। একই সময়ে তিনি ইসলামি মূল্যবোধ ও পশ্চিমাবিরোধী মানসিকতারও আবেদন সৃষ্টি করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীরও খুব কাছের ছিলেন, যদিও পরে এই সম্পর্ক শত্রুতায় পরিণত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতায় থাকার চার বছরের মাথায় ২০২২ সালে সংসদের আস্থা ভোটে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান। পরের বছরই তিনি গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি হন। 

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রীয় উপহার আত্মসাতের অভিযোগে ইমরান খানের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকেও অভিযুক্ত করা হয়। পরে দোষী সাব্যস্ত করে দুজনকেই ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

এই মামলা ছাড়াও বুশরা বিবির আরও কিছু আইনি জটিলতা ছিল। তাঁর সাবেক স্বামী, ২০১৭ সালে বিচ্ছেদের আগে যার সঙ্গে ২৮ বছর সংসার করেছিলেন—সেই খাওবার মানেকাই তাঁকে আইনিভাবে হেনস্তা করতে থাকেন।

সরকারি কর্মকর্তা ও পাকিস্তানের সুপরিচিত এক রাজনীতিবিদের সন্তান মানেকা। গত নভেম্বরে তিনি আদালতে বুশরার বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিয়ে ও ব্যভিচারের অভিযোগ করেন। এর কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানের জিওনিউজের কাছে তিনি দাবি করেছিলেন—বিষয়টি গোপন রাখতে গিয়ে তিনি একঘেয়ে হয়ে পড়েছিলেন, তাই প্রকাশ্যে আনলেন।

পাকিস্তানের আদালত ব্যভিচারের অভিযোগ গ্রহণ না করলেও প্রতারণামূলক বিয়ের অভিযোগটি আমলে নিয়েছে। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে কিংবা স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটলে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করার জন্য তাঁকে অন্তত তিন মাস ইদ্দতকালীন সময় পাড়ি দিতে হয়। অভিযোগ আছে, মানেকার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নির্ধারিত সময় পাড়ি দেওয়ার আগেই ইমরানকে বিয়ে করেছিলেন বুশরা বিবি। 

ইমরান খানের আইনজীবী গহর আলী খান দাবি করেছেন, ইমরান খানকে আরও বেশি চাপে ফেলার জন্যই বুশরা বিবিকেও তোশাখানা মামলায় জড়িয়ে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, ‘এই মামলার সঙ্গে বুশরা বিবির কোনো সম্পর্কই নেই।’

ইমরান খানের জন্য ইলন মাস্কের কাছে জেমিমার আবেদন

দেশভাগের পর এই প্রথম পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত পাঠদান

ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সাবেক গোয়েন্দাপ্রধানের ১৪ বছর কারাদণ্ড

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের উন্নত প্রযুক্তি কিনল পাকিস্তান

পাকিস্তানের সরকার নয়তো জঙ্গি—যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার পরামর্শ আফগান তালেবানকে

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

আফগান সীমান্তে উত্তেজনা: এবার টিটিপির হামলায় ৬ পাকিস্তানি সেনা নিহত

পাকিস্তানে দুই সাংবাদিক ও পিটিআই নেত্রীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

তুমি কে? নিজেকে কী ভাব—পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ ইমরান-সমর্থকদের কড়া প্রতিক্রিয়া