হোম > বিশ্ব > পাকিস্তান

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ: পাকিস্তান রাষ্ট্রে নিজেদের উপেক্ষিত মনে করছে তরুণেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিখ্যাত চিন্তা-পরীক্ষা ‘শ্ৰোডিঙ্গারের বিড়াল’-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক নিবন্ধে। ১৯৩৫ সালে অস্ট্রিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী আর্ভিন শ্রোডিঙ্গার এই পরীক্ষার ধারণা দেন। ‘শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল’ এক বিরোধপূর্ণ অবস্থাকে বোঝায়; যেখানে সিল করা বাক্সে থাকা কাল্পনিক বিড়ালকে একই সময়ে জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় ভাবা হয়, যতক্ষণ না বাক্সটি খুলে সরাসরি দেখা হয়।

পাকিস্তানও যেন ঠিক এমনই এক দ্বৈত বাস্তবতায় আটকে আছে; যেখানে দুই বিপরীত সত্য একই সময়ে চলছে। দেশটি গণতান্ত্রিক, আবার নয়ও; বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আছে, কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে। প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর, আবার ব্যর্থও।

পাকিস্তানে ক্ষমতা সাধারণ মানুষের জন্য নয়, বরং নিজের স্বার্থেই কাজ করে—এমন ধারণা রয়েছে। তাই নতুন সাংবিধানিক সংস্কারকে তারা খুব উৎসাহের সঙ্গে নয়, বরং না পারতে মেনে নিয়েছে।

দেশটির পার্লামেন্টে প্রায় কোনো বিরোধিতা ছাড়াই ১৩ নভেম্বর পাস হওয়া ১৯৭৩ সালের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীতে দুটি বড় পরিবর্তন এনেছে। সুপ্রিম কোর্টকে দুটি পৃথক বেঞ্চ—আপিল ও সাংবিধানিকে ভাগ করা এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফকে উন্নীত করে পুরো পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডারের মর্যাদা দেওয়া।

আলাদাভাবে দেখা হলে উভয় পরিবর্তনেরই যুক্তিযুক্ত কারণ আছে। পাকিস্তানের উচ্চ আদালত বহু দশক ধরে মামলার চাপে ডুবে আছে। এ চাপ আরও বেড়েছে ‘অ্যাকটিভিস্ট’ বিচারপতিদের কারণে; যাঁরা ২০০৮ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর রাজনীতিসংক্রান্ত শুনানিতে অস্বাভাবিক পরিমাণ সময় ব্যয় করেছেন।

একই সময়ে সরকার যুক্তি দেখিয়েছে, আধুনিক যুদ্ধ মোকাবিলায় আরও সমন্বিত সামরিক কাঠামো দরকার; বিশেষ করে, গত মে মাসে ভারতের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি কিন্তু প্রাণঘাতী এক আকাশযুদ্ধের পর।

ফলে আনুষ্ঠানিক পদ ‘চেয়ারম্যান অব দ্য জয়েন্ট চিফস’-এর পরিবর্তে বাস্তব ক্ষমতাসম্পন্ন ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ নিয়োগ করা হয়েছে।

কিন্তু পাকিস্তানের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এই সংশোধনীগুলো কার্যকর প্রশাসনিক সংস্কারের চেয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পদক্ষেপ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বহুদলীয় জোট এমন এক সুযোগ নিয়েছে, যা দিয়ে তারা সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করতে পারে। যে আদালত বিভিন্ন সময়ে জনপ্রিয়তা ও পক্ষপাতের ঝোঁকে নির্বাচিত সরকারগুলোর স্থিতি নষ্ট করেছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রভাব বিস্তারের চাহিদাও মেটাচ্ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের শীর্ষ বিচারপতিরা বারবার রাজনৈতিক অঙ্গনে হস্তক্ষেপ করেছেন। কখনো প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করে; কখনো আবার পছন্দের নেতাদের রক্ষা করতে এগিয়ে এসে।

২০১২ সালে ইউসুফ রাজা গিলানি এবং ২০১৭ সালে নওয়াজ শরিফকে যে আইনি ভিত্তিতে অপসারণ করা হয়, তা ব্যাপকভাবে সন্দেহজনক বলে দেখা হয়।

এ ছাড়া সাবেক এক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ইমরান খানকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। বর্তমানে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোট ১৪ বছর কারাদণ্ড ভোগ করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

সুপ্রিম কোর্টকে ভাগ করে দিয়ে শাহবাজ শরিফের জোটকে অনেকে মনে করছেন, সেনাবাহিনীর ইচ্ছাই তারা পূরণ করছে। পাকিস্তানের জেনারেলরা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, ইমরান খানকে জেলে রাখা হবে যতক্ষণ না তিনি নতি স্বীকার করেন; যেমনটা এরই মধ্যে দেশটির বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতৃত্ব করেছে।

কিন্তু লড়াকু স্বভাবের প্রতি অনুগত থেকে মাথা নোয়াতে অস্বীকার করেছেন ইমরান। তিনি নির্ভর করছেন তাঁর ব্যাপক জনসমর্থন ও সময়ের ওপর, যা একসময় পাকিস্তানের ‘হাইব্রিড গণতন্ত্র’-কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বলে মনে করছেন সমালোচকেরা।

এই ব্যবস্থায় নির্বাচিত রাজনীতিক ও সামরিক নেতৃত্ব যৌথভাবে দেশ চালালেও শেষ পর্যন্ত ভেটো ক্ষমতা থাকে জেনারেলদের হাতে।

‘শ্রোডিঙ্গারের পাকিস্তান’

সংসদে সম্প্রতি পাস হওয়া ১৯৭৩ সালের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ইসলামাবাদ, লাহোরের মতো বড় শহর থেকে শুরু করে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাবের গ্রামীণ এলাকার ২২ থেকে ৫১ বছর বয়সী কয়েকজন পাকিস্তানির সঙ্গে কথা হয় দিস উইক ইন এশিয়ার। সবার মধ্যেই কমবেশি হতাশা স্পষ্ট।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তুরস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক পাস করে এখন ইসলামাবাদের বাসিন্দা ২৪ বছর বয়সী আজলান আলী।

আজলান বলেন, সংসদ, সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগ—এই তিনের মধ্যে যেন এক নীরব ক্ষমতার লড়াই চলছে। সহাবস্থান করার বদলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই পাকিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর জন্য লড়াই করছে বলে মনে হয়।

লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের স্নাতক শিক্ষার্থী মারুখ খালিদের কাছে সমস্যা শুধু একটি সংশোধনীতে সীমাবদ্ধ নয়।

২২ বছর বয়সী এই তরুণ বলেন, ‘পাকিস্তানের সব প্রতিষ্ঠানই ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে এবং সাধারণ মানুষের জন্য তারা প্রায় কিছুই করছে না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাধরদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী হওয়ার চেষ্টা করছে, যা দেশের মানুষ দেখতে বাধ্য হচ্ছে। ২৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে আমরা সেটিই দেখছি।’

লাহোরের ফরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজ ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা প্রকল্প ও জনসংযোগের কাজ করা ৩০ বছর বয়সী আয়েশা সিদ্দিকা সংস্কারগুলোতে দেখছেন ‘ক্ষমতার নগ্ন প্রদর্শন’।

আয়েশা বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো এখন খোলাখুলিভাবে পাকিস্তানের মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছে—কারা কীভাবে দেশ চালায়।

সেনাবাহিনীর সমর্থন হারানোর পর ইমরান খানকে যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, এর পর থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ‘উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন’ লক্ষ করেছেন এই তরুণী।

আয়েশা বলেন, নিজেদের সুনাম বাঁচানোর পরিবর্তে জেনারেলরা রাজনীতিক, বিচার বিভাগ ও সংসদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের আরও শক্তিশালী করে তুলেছে, যা অন্যদের মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার ছিল না।

ইমরান খানকে মেরে ফেললে কী প্রতিক্রিয়া হয়, দেখতে চেয়েছে সরকার—বোনের দাবি

বোনের সঙ্গে ২০ মিনিটের আলাপে আসিম মুনিরের বিরুদ্ধে ইমরান খানের অভিযোগ

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

অবশেষে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা হলো বোনের

নিষেধাজ্ঞা ভেঙে ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডিতে ইমরানের দলের বিক্ষোভের ডাক

ইমরান খানের এমন কিছু ঘটেছে, যা পরিবর্তন করা যাচ্ছে না—ছেলেদের আশঙ্কা

পাকিস্তানে দূতাবাস বন্ধের ঘোষণা দিল ফিনল্যান্ড

তালেবানের ওপর বিরক্ত পাকিস্তান–ইরান, ৪৫ লাখ আফগান শরণার্থীকে বহিষ্কার

আরব আমিরাতে পাকিস্তানিদের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, ভিসায় কড়াকড়ি

আদিয়ালা জেলেই আছেন ইমরান খান, সুস্থ আছেন: কর্তৃপক্ষ