হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

ইরানে ইসলামি শাসনের অবসান হতে পারে—মার্কিন কর্মকর্তাদের আশঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনি। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের পেছনে দেশটিতে ‘ক্ষমতা পরিবর্তনের’ প্রচেষ্টা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মার্কিন গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দাসংক্রান্ত একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক গোয়েন্দা বিশ্লেষণগুলোতে ইঙ্গিত মিলেছে যে ইসরায়েল এমন একটি সুযোগ হিসেবে এই হামলাকে বিবেচনা করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ‘শাসন পরিবর্তন’ ছিল বলে কোনো সরাসরি গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট মার্কিন সূত্র বলছে, ইসরায়েলের সরকারের দীর্ঘদিনের একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা এই লক্ষ্য। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের এমন প্রয়াসকে সমর্থন করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ইরানের বর্তমান ইসলামি শাসনব্যবস্থা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর প্রতিষ্ঠিত হয়। আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে শাহের পশ্চিমাপন্থী রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে ওই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। দেশটির বর্তমান শাসনব্যবস্থায় সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষমতা রয়েছে ‘সর্বোচ্চ নেতা’ বা ‘রাহবরে মোআজ্জাম’-এর হাতে। তিনি দেশের সামরিক, বিচারিক ও গণমাধ্যম নীতিনির্ধারণেও প্রভাবশালী। ইরান একটি নির্বাচিত সংসদ ও প্রেসিডেন্ট থাকলেও বাস্তবে ক্ষমতা কাঠামোতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও গার্ডিয়ান কাউন্সিলের আধিপত্য প্রবল। এই শাসনব্যবস্থা ধর্মীয় বিধান ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের এক মিশ্র রূপ।

এদিকে আজ শুক্রবার হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু সক্ষমতাকে ধ্বংস করে ইসরায়েলের অস্তিত্বের হুমকি দূর করা।

কাটজ বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যদি তা হাতছাড়া হয়, তাহলে আর কোনো উপায় থাকবে না ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে রোধ করার।’

ইসরায়েল গত দেড় বছরে ইরানের ছায়াসেনা ও মিত্রদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এলেও এবার সরাসরি ‘সাপের মাথায়’ আঘাত হেনেছে বলে উল্লেখ করেন কাটজ।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড গত মার্চে কংগ্রেসে জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখনো মনে করে ইরান সক্রিয়ভাবে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতা ২০০৩ সালে যে কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন, তা এখনো পুনরায় অনুমোদন দেননি।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব কম তথ্যবিনিময় করেছে, তারপরও গত সপ্তাহ থেকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে অভিযানের কাঠামো, লক্ষ্যবস্তু ও সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়াসংক্রান্ত তথ্য ছিল। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রতিদিন একাধিকবার আপডেট পাচ্ছিলেন এবং ইরানের জবাবের ভিত্তিতে নানা পরিস্থিতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

তবে এই হামলায় ইরানের সামরিক ও পরমাণু নেতৃত্বের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং ইরান কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে—এই দুটি বিষয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, উত্তেজনার এই পর্যায়ে এসে বিষয়টি আর কেবল প্রতিরক্ষামূলক হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা বৃহৎ ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, ইরান কীভাবে এই হামলার জবাব দেয় এবং এতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি হয় কি না।

আরও খবর পড়ুন:

গাজায় হামাসবিরোধী ইসরায়েলি প্রক্সি গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব নিহত, কে তিনি

গাজায় যুদ্ধবিরতি খুব ভালোভাবে চলছে, দ্বিতীয় ধাপ শুরু শিগগির: ট্রাম্প

মার্কিন মধ্যস্থতায় ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবার সরাসরি আলোচনায় লেবানন-ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের নেলসন ম্যান্ডেলা: বারঘৌতির মুক্তির দাবিতে সোচ্চার দুই শতাধিক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

‘সর্বত্র ভূত দেখে’ যত্রতত্র ‘বোমা ফেলছেন বিবি’, লাগাম টানতে ব্যর্থ যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই একমাত্র সমাধান—পোপ

দুর্নীতির মামলায় প্রেসিডেন্টের কাছে নেতানিয়াহুর ক্ষমা প্রার্থনা

গাজার পুলিশ বাহিনী গঠনে হাজারো ফিলিস্তিনিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মিসর

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছে, নিহত ৭০ হাজার ছাড়াল

সংঘবদ্ধ নির্যাতন ‘কার্যত’ ইসরায়েলের রাষ্ট্রনীতি, কুকুর হামলা, যৌন নির্যাতনের চিত্র জাতিসংঘের প্রতিবেদনে