ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ৪৬৮ মিলিয়ন ডলারের (৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড) একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ভারতীয় সেনাবাহিনী যুক্তরাজ্যে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র পাবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এক যৌথ বিবৃতিতে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এই চুক্তি ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও জোরদার করবে। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নীতির আওতায় এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণ করবে এবং জটিল অস্ত্র নির্মাণে ভারত-যুক্তরাজ্যের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার পথ খুলে দেবে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের ফলে উত্তর আয়ারল্যান্ডে (নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড) ৭০০টিরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। উল্লেখ্য, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের সঙ্গে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের চারটি অংশের একটি।
এ ঘোষণা আসে ভারতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রথম আনুষ্ঠানিক সফরের শেষ দিনে। এই সফরে স্টারমারের সঙ্গে ছিলেন ১২৫ জন ব্যবসায়িক নেতার একটি প্রতিনিধিদল। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মুম্বাইয়ে বৈঠক করেন।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এই চুক্তির আওতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বেলফাস্টে নির্মিত হালকা বহুমুখী ক্ষেপণাস্ত্র (এলএমএ বা লাইটওয়েট মাল্টিরোল মিসাইল) সরবরাহ করা হবে। এটি যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা শিল্পে বড় ধরনের সাফল্য এবং সরকারের প্ল্যান ফর চেঞ্জ কর্মসূচির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারতের জন্য তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ও লঞ্চারগুলো বর্তমানে বেলফাস্টে ইউক্রেনের জন্যও উৎপাদিত হচ্ছে। এর ফলে উত্তর আয়ারল্যান্ডে ৭০০টিরও বেশি চাকরি নিশ্চিত হবে।
চুক্তিটি ভবিষ্যতে ভারত-যুক্তরাজ্যের মধ্যে আরও বৃহত্তর ‘জটিল অস্ত্র অংশীদারত্ব’ গড়ে তুলতে পারে বলে জানিয়েছে দুই দেশ। এ ছাড়া, দুই পক্ষ নৌবাহিনীর জাহাজে ব্যবহারের জন্য বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন উন্নয়নেও একটি চুক্তি (Implementing Agreement) সই করেছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষাসচিব জন হিলি বলেন, ‘আজ ঘোষিত প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে, ভারত-যুক্তরাজ্যের কৌশলগত সম্পর্ক কীভাবে উভয় দেশের ব্যবসা ও কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছে। আমি আশা করি, এটি আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্পের মধ্যে আরও গভীর সহযোগিতার পথ খুলবে—বিশেষ করে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন উন্নয়ন ও বিমান প্রতিরক্ষা খাতে।’
লাইটওয়েট মাল্টিরোল মিসাইল বা মার্টলেট কী
এলএমএম বা মার্টলেট হলো হালকা ওজনের একধরনের বহুমুখী ক্ষেপণাস্ত্র, যা আকাশ থেকে আকাশে, আকাশ থেকে স্থলে, স্থল থেকে আকাশে কিংবা স্থল থেকে স্থলে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এটি তৈরি করেছে বেলফাস্টভিত্তিক প্রতিরক্ষা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থ্যালেস এয়ার ডিফেন্স।
‘মার্টলেট’ নামটি মূলত একটি পৌরাণিক পাখির নাম। ইংরেজদের যুদ্ধের সাজে এই পাখির একটি কাল্পনিক ছবি থাকে, যার পা নেই। অর্থাৎ এই পাখি কখনো বিশ্রাম নেয় না।
এই ক্ষেপণাস্ত্রটি মূলত যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভির ‘ফিউচার এয়ার টু সার্ফেস গাইডেড ওয়েপন (লাইট)’ প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনেও সরবরাহ করা হচ্ছে। এটি সাধারণত বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয় এবং এটি ড্রোন, সাঁজোয়া যানসহ বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে সক্ষম।