পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আজকের বিশেষ অধিবেশনে রাজ্যের বাইরে বাংলাভাষীদের ওপর বাড়তে থাকা হেনস্তা ও নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে তীব্র আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়। পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেন, যা স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রহণ করেছেন।
সূচি অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার ও আগামী বৃহস্পতিবার—দুদিনই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে এ বিষয়ে আলোচনা চলবে। তবে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকলেও ‘কলিং অ্যাটেনশন’ ও ‘মেনশন’ পর্ব স্থগিত থাকবে, যা বিতর্ককে আরও কেন্দ্রীভূত করবে। আগামী বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আলোচনায় অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে। ওই দিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকও নির্ধারিত রয়েছে, যা এ বিতর্কের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় তাঁর প্রস্তাবে অভিযোগ করেন, ঝাড়খন্ড, বিহার, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, ওডিশা, মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, আন্দামান-নিকোবরসহ বিভিন্ন এলাকায় বাংলাভাষীদের কেবল ভাষাগত পরিচয়ের কারণে শারীরিক আক্রমণ ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, বাংলা দেশের আট দশমিক শূন্য তিন শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা এবং পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের বরাক উপত্যকায় এটি সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।
শোভনদেব নাম না করে কেন্দ্রের শাসক দলের সমালোচনা করে বলেন, বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ আখ্যা দেওয়া এবং বাংলাভাষীদের বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আলোচনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, এটি কেবল রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, ভাষা ও সংস্কৃতির মর্যাদা রক্ষার প্রশ্ন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সব দলের পরিষদীয় দল শান্তিপূর্ণভাবে এ বিতর্কে অংশ নেবে। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, কোনো পক্ষ থেকে বিদ্বেষ গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, বাংলার ভেতরেও এক হিন্দিভাষী ব্যবসায়ী তাঁর কর্মচারীদের বাংলাভাষা নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। এটা কাম্য নয়।
অধিবেশনে বিরোধী শিবিরের একাংশ এ প্রস্তাবকে ‘রাজনৈতিক লাভের কৌশল’ বলে অভিহিত করেছে। তবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এটিকে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা, নাগরিক অধিকার ও ভাষাগত মর্যাদার প্রশ্নে সর্বদলীয় ঐকমত্য গড়ার সুযোগ হিসেবে দেখছে।