উত্তর প্রদেশে ক্রমবর্ধমান কুকুর কামড়ের ঘটনা জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণে নতুন নিয়ম চালু করেছে রাজ্য সরকার। নতুন নিয়ম অনুসারে, কোনো কুকুর যদি কাউকে কামড়ায় তবে সেটিকে প্রথমবার ১০ দিনের জন্য এক ধরনের ‘কারাগারে’ রাখা হবে। তবে একাধিকবার এই ঘটনা ঘটালে সেটিকে স্থায়ীভাবে আটকে রাখা হবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুসারে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ে এক বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে—কোনো কুকুর যদি বিনা প্ররোচনায় মানুষকে কামড়ায়, তবে সেটিকে ১০ দিন আটকে রেখে পশুকেন্দ্রে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর প্রয়োজন হলে সেটিকে নির্বীজকরণ করা হবে, শরীরে মাইক্রোচিপ বসানো হবে এবং আবার আগের এলাকাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে।
তবে যেসব কুকুর একাধিকবার একই আচরণ করবে, সেগুলোকে স্থায়ীভাবে আটকে রাখা হবে প্রাণী আশ্রয়কেন্দ্রে। কেউ দত্তক নিলে তবেই মুক্তি মিলবে। দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে একটি হলফনামা জমা দিতে হবে, যেখানে আজীবন যত্ন নেওয়া এবং কোনো অবস্থাতেই প্রাণীটিকে পরিত্যাগ না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ পৌর করপোরেশনের ভেটেরিনারি ও প্রাণী কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. বিজয় অমৃতরাজ জানিয়েছেন, নতুন নিয়মের উদ্দেশ্য হলো সত্যিকারের হিংস্রতা আর প্ররোচিত আক্রমণের মধ্যে পার্থক্য করা। তিনি বলেন, ‘কোনো কামড় প্ররোচিত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে। এতে থাকবেন একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসক, একজন প্রাণী আচরণ বিশেষজ্ঞ এবং পৌরসভার প্রতিনিধি। কেউ যদি বারবার কুকুরকে উসকানি দিয়ে কামড়াতে বাধ্য করে, তবে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যেসব ক্ষেত্রে কুকুরের হিংস্র আচরণ মানসিক চাপ বা প্ররোচনার কারণে ঘটে, সেখানে তাদের জন্য আচরণ সংশোধনমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ১০ সেপ্টেম্বর রাজ্যের মুখ্যসচিব অমৃত অভিজাত স্বাক্ষরিত এই নির্দেশনাটি মূলত শহরাঞ্চলে বাড়তে থাকা বেওয়ারিশ কুকুর কামড়ের ঘটনা কমানোর উদ্যোগের অংশ।
এ উদ্যোগ এল ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশনার পর। এই নির্দেশে রাজ্যগুলোকে মানবিক হলেও কার্যকর উপায়ে বেওয়ারিশ কুকুর সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়েছিল। কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন নীতিতে জননিরাপত্তা ও প্রাণী কল্যাণের মধ্যে ভারসাম্য আনা হয়েছে। তবে কুকুর কামড়ের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে বলে নীতিটি কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করবে কঠোর বাস্তবায়ন আর স্থানীয়দের সহযোগিতার ওপর।