দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়াকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে দুটি ভূমিকম্প। এতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধারকারীরা মরিয়া হয়ে ধসে পড়া ভবনের কংক্রিট খুড়ে চলেছেন, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলো চোখের পলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কত মানুষ চাপা পড়েছেন সেসবের নিচে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো মেলেনি। প্রায় দুই হাজার বছর পুরোনো একটি দুর্গকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে এই ভূমিকম্প। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে সেসব দৃশ্য বিশ্ববাসীর সামনে আসছে।
কিন্তু কিছু ছবি তুরস্কের কাহরামানমারাস অঞ্চলের একটি ছবির মতো সেখানকার মানুষের ক্ষতি ও যন্ত্রণাকে যেন স্পষ্টভাবে চিত্রিত করছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক বাবা ধসে পড়া ভবনের ওপর তাঁর মৃত কিশোরী কন্যার হাত ধরে নির্বাক হয়ে বসে রয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কুঁকড়ে বসে থাকা মেসুত হ্যান্সার ১৫ বছর বয়সী ইরমাকের একটি হাত ধরে রেখেছেন। কংক্রিটের স্ল্যাব, ভাঙা জানালা এবং ভাঙা ইটগুলোর নিচে নিজের বিছানায় শুয়ে আছে মেয়েটি। এটিই ছিল হ্যান্সারের অ্যাপার্টমেন্ট। বাবা এবং মেয়ের কাছাকাছি একটি স্লেজহ্যামার নিয়ে এক ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের ভেতর দিয়ে পথ তৈরি করার চেষ্টা করছেন। একটি ভয়ানক দুর্যোগ পরবর্তী অবস্থা বোঝাতে এর চেয়ে অর্থবহ একই সঙ্গে তীব্র বেদনার ছবি আর হয় না!
কাহরামানমারাস প্রদেশের অন্য একটি স্থানে উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে দুটি শিশুকে জীবিত উদ্ধার করেছে। একটি শিশু তুষার আবৃত মাটিতে স্ট্রেচারে শুয়ে ছিল। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, উদ্ধারকারীরা উদ্বিগ্ন উত্তেজিত লোকদের ভিড়কে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। যাতে তাঁরা ভেঙে পড়া ভবনের নিচে আটকে পড়া বা এখনো কোনোরকম বেঁচে থাকা কারও আওয়াজ শুনতে পারেন।
বার্তা সংস্থা এপির বর্ণনা অনুযায়ী, সীমান্তের অপর প্রান্তে, একজন সিরীয় তাঁর মৃত মেয়েকে পাঁজাকোলা করে একটি ধসে পড়া দ্বিতল ভবনের ধ্বংসাবশেষ পেরিয়ে হেঁটে যান।
এএফপির প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তর সিরিয়ার একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি নবজাতককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আত্মীয়রা এই শিশুকে তার মায়ের সঙ্গে নাভির কর্ড জোড়া লাগা অবস্থায় দেখতে পান। তার মানে, গত সোমবারের ভূমিকম্পের সময়ই মারা গেছেন ওই গর্ভবতী। সন্তানের মুখ আর দেখে যেতে পারলেন না। প্রসব বেদনাও কি অনুভব করেছিলেন!
পরপর দুটি বড় মাত্রার ভূমিকম্পের পর শখানেক আফটার শক (পরাঘাত), হিমশীতল আবহাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ভেতরে ও বাইরের রাস্তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বলেছে, তাদের কাছে ১১ হাজার ৩৪২টি ভবন ধসে পড়ার খবর রয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৭৫ টির ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছেন।