স্পেনে যেন ঘূর্ণিঝড়ের মতো বইছে রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির ঝাপটা। প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ নিজেই পড়ে গেছেন বড়সড় বিতর্কের মুখে। ঘুষ, যৌনকর্মী ভাড়া এবং দলীয় ভাঙন—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে বসেছে।
হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সানচেজের দলের শীর্ষ নেতা সান্তোস সেরদানকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযোগ—তিনি শুধু ঘুষই নেননি, বরং যৌনকর্মী ভাড়া করেও সময় কাটিয়েছেন। এতে বেকায়দায় পড়ে গেছে স্পেনের ক্ষমতাসীন সোশ্যালিস্ট পার্টি।
রাজনৈতিক ক্ষত মেরামতে মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গত শনিবার তিনি ঘোষণা দেন, দলের কেউ অর্থের বিনিময়ে যৌনসেবা চাইলে কিংবা নিলে তাঁর ঠাঁই হবে না সোশ্যালিস্ট পার্টিতে। সরাসরি বলেই দিলেন, ‘এমন কাজ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ দল থেকে বহিষ্কার অবধারিত।’
মাদ্রিদের পার্টি অফিসে কঠিন ভাষায় সানচেজ বললেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, নারীর শরীর বিক্রির জিনিস নয়। সুতরাং, দলের ভেতরে কেউ এর উল্টো কিছু করলে তা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না।’ অবশ্য শুধু সতর্ক বাণী নয়, দলের ভেতর বড়সড় রদবদলও শুরু হয়েছে। বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা সান্তোস সেরদানকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে ৪৪ বছর বয়সী আইনজীবী রেবেকা তোর্রোকে।
কিন্তু ঝামেলা এখানেই শেষ হয়নি। দলের আরেক হেভিওয়েট নেতা ফ্রান্সেসকো সালাজার, যিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে যাচ্ছিলেন, শেষ মুহূর্তে পদত্যাগ করে বসেন। কারণ? দলের বেশ কয়েকজন নারী কর্মীর অভিযোগ, সালাজারের আচরণ ছিল ‘অশালীন।’
এর মধ্যেই আরও এক বিস্ফোরণ—সাবেক পরিবহনমন্ত্রী হোসে লুইস আবালোসের বিরুদ্ধেও ওঠে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে সানচেজের সোশ্যালিস্ট পার্টি এখন কার্যত ভূমিকম্পের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
বিরোধী ডানপন্থী পিপলস পার্টি (পিপি) সুযোগটা হাতছাড়া করছে না। দলের নেতা আলবার্তো নুনেজ ফেইহো সরাসরি বলেছেন, ‘স্পেনের মানুষ এমন সরকার চায় না, যারা মিথ্যা বলে, লুটপাট করে। আমরাই এই বিশৃঙ্খলার বিকল্প।’
সবাই যখন সানচেজের পদত্যাগের দাবি তুলছে, তখন তিনি নিজের অবস্থানে অনড়। বললেন, ‘ঝড়-তুফান এলেই নাবিক পালিয়ে যায় না। বরং দাঁতে দাঁত চেপে জাহাজ চালিয়ে যায়। আমিও তেমনটাই করব।’