হোম > বিশ্ব > ইউরোপ

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকেই ইহুদিদের রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে ইউরোপের দেশ সাইপ্রাস। বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের বৃহত্তম আশ্রয়শিবির হয়ে উঠেছিল এই দ্বীপ দেশ। সর্বশেষ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সময়ও হাজার হাজার ইহুদি সাইপ্রাসে আশ্রয় নিয়েছিল। শোনা যায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেও সাইপ্রাসে পালিয়েছিলেন।

সে হিসেবে সাইপ্রাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কে বেশ উষ্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রিয়েল এস্টেটে ইসরায়েলিদের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ নিয়ে সাইপ্রাসে সাধারণ নাগরিক ও রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের নাগরিকেরা সহজেই সাইপ্রাসে জমি কিনতে পারেন। কিন্তু এই জোটের বাইরে দেশগুলোর জন্য নিয়মকানুন আলাদা। এরপরও ইসরায়েলের নাগরিকদের সাইপ্রাসে ব্যাপক হারে ভূমি ও রিয়েল এস্টেট কেনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটির বামপন্থী রাজনৈতিক দল আকেল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘গোল্ডেন ভিসা’ প্রদানের প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনতে নতুন আইন প্রস্তাব করছে দলটি। দেশটির সংবাদমাধ্যম সাইপ্রাস মেইল এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমবারের মতো এই ইস্যুতে গুরুত্বারোপ করল দেশটির কোনো রাজনৈতিক দল। আকেল নেতা স্তেফানো স্তেফানো সাইবিসি (CyBC) রেডিওকে বলেন, ‘সাইপ্রাস একটি ছোট দেশ এবং এটি একটি অস্থির অঞ্চলের মাঝে অবস্থিত। এ কারণে আমরা ক্রমাগত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরব, তবে সরকারেরও এগিয়ে আসা জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছরে নির্মাণ খাতে ব্যাপক উল্লম্ফনের সঙ্গে সঙ্গে তৃতীয় দেশের (অ-ইইউ) নাগরিকদের বিপুল পরিমাণে রিয়েল এস্টেট ক্রয় লক্ষ্য করা গেছে। সাইপ্রাসের তুলনায় অনেক বড় দেশ—যেমন স্পেন, ইতালি, এমনকি জার্মানি—তৃতীয় দেশের নাগরিকদের কাছে রিয়েল এস্টেট বিক্রিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কারণ একদিকে তারা তাদের ভূমি সুরক্ষিত রাখতে চায়, আর অন্যদিকে রিয়েল এস্টেটের দামও নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।’

এ ইস্যুতে পার্লামেন্টে দুটি বিল উত্থাপন করেছে আকেল দল। বিল দুটির লক্ষ্য হলো, তথাকথিত ‘গোল্ডেন ভিসা’ সীমিত ও পর্যবেক্ষণযোগ্য করে তোলা। এই ভিসাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশের নাগরিকদের দেওয়া হয়। ভিসাটি পেতে সাইপ্রাসে অন্তত ৩ লাখ ইউরোর রিয়েল এস্টেট বা কোম্পানির শেয়ার কিনতে হয়। বিলের আরও একটি উদ্দেশ্য হলো, অন্য বিকল্প যেসব পন্থার মাধ্যমে তৃতীয় কোনো দেশের নাগরিকেরা জমি কিনতে পারেন, সেগুলোও নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা।

আকেল বলছে, ইসরায়েলিরা যেসব সম্পত্তি কিনছে, সেগুলো মূলত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর আশপাশে সংবেদনশীল ভৌগোলিক অঞ্চলে অবস্থিত। গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা জানতে স্তেফানোর সঙ্গে যোগাযোগ করে সাইপ্রাস মেইল। স্তেফানো সাইপ্রাস মেইলকে এসব সংবেদনশীল স্থাপনার উদাহরণ হিসেবে ন্যাশনাল গার্ডের স্থাপনাগুলোর কথা উল্লেখ করেন। তবে, নির্দিষ্ট করে কোনো নাম বলেননি তিনি।

সাইবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আকেল নেতা ব্যাখ্যা করেন, কেন তাঁদের দলের নজর ইসরায়েলি নাগরিকদের দিকে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে লিমাসোল ও লারনাকা অঞ্চলে ব্যাপক হারে রিয়েল এস্টেট কিনছে ইসরায়েলিরা। নির্দিষ্ট কিছু এলাকা এমনভাবে কেনা হচ্ছে, যাতে সেখানে গেটেড কমিউনিটি গড়ে উঠছে। ফলে কার্যত ইসরায়েলি নাগরিক ছাড়া অন্য কারও জন্য সেখানে প্রবেশের আর সুযোগ থাকছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে জায়নবাদী স্কুল নির্মাণ হচ্ছে, সিনাগগও নির্মিত হচ্ছে। ইসরায়েল যেন সাইপ্রাসে একটি ব্যাকইয়ার্ড তৈরি করছে। যেমনটি তাদের দেশের বেশ কিছু প্রভাবশালী পত্রিকায় প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।’ স্তেফানোর দাবি, স্থানীয় বাসিন্দারাও ইসরায়েলিদের এসব কার্যকলাপ সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি লারনাকা বা লিমাসোলে যান, সেখানকার মানুষ আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু এলাকার কথা বলবে, যেখানে এই ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এসব উপেক্ষা করে যাচ্ছে।’

এর আগে গত সপ্তাহে তিনি সরকারকে সতর্ক করে বলেন, ‘যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিই, তাহলে একসময় আমরা দেখব—আমাদের নিজেদের ভূমি আর আমাদের নেই!’

সম্প্রতি পার্লামেন্টে এক সদস্যের প্রশ্নের জবাবে সরকার বিদেশি নাগরিকদের দ্বারা সাইপ্রাসে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত লারনাকায় ইসরায়েলি নাগরিকেরা সম্পত্তি ক্রয়ের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। সেখানে ইসরায়েলিরা মোট ১ হাজার ৪০৬টি সম্পত্তি কিনেছে, যার মধ্যে ৪৮১টির মালিকানা দলিল রয়েছে। এ ছাড়া লারনাকায় লেবানিজ নাগরিকেরা ১ হাজার ৭৪৪টি এবং যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা ২ হাজার ৭৪৩টি সম্পত্তি কিনেছে।

সরকারি তথ্যে দেখা যায়, লিমাসোল জেলাতেও ইসরায়েলিরা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে—সেখানে তাঁরা ১ হাজার ১৫৪টি সম্পত্তি কিনেছে, যার মধ্যে ৫১১টির মালিকানা দলিল রয়েছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা ১ হাজার ৮৪০টি এবং রুশ নাগরিকেরা ২ হাজার ৫৬১টি সম্পত্তি কিনেছে। আর সব জেলায়ই সাইপ্রাসের নাগরিকেরাই সম্পত্তি ক্রয়ের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়া, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

ইসরায়েলকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ায় ইউরোভিশন বয়কট ৪ দেশের

খুবই সাধারণ খাবার খান পুতিন, দেশে-বিদেশে খাদ্যতালিকায় যা থাকে

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

রাশিয়ার ক্ষমতা দেখাতেই গুপ্তচর স্ক্রিপালকে বিষ প্রয়োগে হত্যার নির্দেশ দেন পুতিন

কড়া নিরাপত্তায় পুতিনের ভারত সফর, রাশিয়া থেকে উড়িয়ে আনা হলো বুলেটপ্রুফ লিমুজিন

যেভাবেই হোক দনবাস দখলে নেবে রাশিয়া: পুতিন

যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ হচ্ছে বাংলাদেশি–পাকিস্তানি ভর্তি, প্রায় ১২ হাজার ভিসা আবেদন বাতিল

স্মার্টফোন নেই পুতিনের, ব্যবহার করেন না ইন্টারনেটও, কিন্তু কেন