বিশ্বের অন্যতম নিষ্ঠুর ও ধ্বংসাত্মক স্নায়বিক অসুখ হান্টিংটন রোগের প্রথম সফল চিকিৎসার ঘোষণা দিলেন চিকিৎসকেরা। এই রোগ বংশানুক্রমে এবং পরিবার থেকে পরিবারে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করে এবং একই সঙ্গে ডিমেনশিয়া, পারকিনসন ও মোটর নিউরন রোগের মতো উপসর্গ তৈরি করে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) হান্টিংটন ডিজিজ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর সারা তাবরিজি জানিয়েছেন, নতুন জিন থেরাপি ওই রোগটির অগ্রগতি গড়ে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ধীর করেছে। এর ফলে রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত এক বছরে যে অবনতি দেখা যায়, চিকিৎসার পর সেটি হতে চার বছর লাগবে। এর ফলে রোগীরা আরও দীর্ঘসময় ভালো মানের জীবনযাপন করতে পারবেন।
এই থেরাপি প্রয়োগের জন্য ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা ধরে জটিল মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার করতে হয়। এ ক্ষেত্রে মূলত একটি নিরাপদ ভাইরাসের মাধ্যমে একটি বিশেষ ডিএনএ রোগীর মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে প্রবেশ করানো হয়। এই ডিএনএ মস্তিষ্কের কোষকে এমনভাবে বদলে দেয়, যেন তারা ক্ষতিকর হান্টিংটিন প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়। ফলে স্নায়ুকোষগুলো ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, পরীক্ষামূলক চিকিৎসায় ২৯ জন অংশ নিয়েছিলেন। ফলাফলে দেখা গেছে, অস্ত্রোপচারের তিন বছর পরও তাঁদের রোগের গতি ৭৫ শতাংশ ধীর হয়েছে। রোগীর বুদ্ধিবৃত্তি, নড়াচড়া ও দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্ষমতা—সবকিছুতেই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এমনকি যাদের হুইলচেয়ারে বসার কথা ছিল, তারা এখনো হাঁটতে পারছেন। কেউ কেউ অবসরের পর আবার কাজে ফিরেছেন।
হান্টিংটন রোগ সাধারণত ৩০ বা ৪০-এর দশকে ধরা পড়ে এবং ২০ বছরের মধ্যে মৃত্যু ডেকে আনে। তবে গবেষকেরা আশা করছেন, আগে চিকিৎসা শুরু করা গেলে হয়তো উপসর্গই দেখা দেবে না।
এই সাফল্যে রোগাক্রান্ত পরিবারগুলো নতুন আশার আলো দেখছে। উদাহরণ হিসেবে জ্যাক মে-ডেভিস বলেন, তাঁর বাবা ও দাদি এই রোগে মারা গেছেন। তিনিও জেনেটিকভাবে ঝুঁকিতে আছেন। এত দিন ভেবেছিলেন বাবার মতো একই পরিণতি হবে তাঁরও, কিন্তু নতুন চিকিৎসার খবর তাঁকে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী করেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, চিকিৎসাটি ব্যয়বহুল ও জটিল হলেও এটি আজীবন স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ মস্তিষ্কের কোষ নতুন করে প্রতিস্থাপিত হয় না। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ এ রোগে ভুগছেন, আর কয়েক লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ এই জিন বহন করছেন।
তবে চিকিৎসার অগ্রগতির বিষয়ে প্রফেসর সারা তাবরিজি বলেন, ‘এটি কেবল শুরু। আমরা প্রথমবারের মতো রোগ প্রতিরোধমূলক ট্রায়াল চালানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছি।’