উচ্চ কোলেস্টেরলকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। কারণ, এটি ধমনির ভেতরে ধীরে ধীরে জমা হয় এবং সাধারণত কোনো স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ করে না। নীরবে এটি হৃদ্রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা বলেন, ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট নামক একধরনের ফ্যাট রয়েছে, যা দেহে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। এই খারাপ কোলেস্টেরল আমাদের ধমনিতে জমে প্ল্যাক তৈরি করে হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটায়।’
আপনি হয়তো নিজেকে পুরোপুরি সুস্থ মনে করছেন, কিন্তু আপনার শরীর কিছু বলতে চাইছে। অস্বাভাবিক ক্লান্তি, শারীরিক পরিশ্রমের সময় বুকে অস্বস্তি বা চোখের চারপাশে কিংবা গাঁটে ছোট ছোট হলুদ দানা—এগুলো হতে পারে উচ্চ কোলেস্টেরলের প্রাথমিক সতর্কবার্তা।
চোখের চারপাশে হলদে দাগ
আপনার কি চোখের পাতার চারপাশে নরম, হলুদ রঙের দানা দেখা গেছে? এগুলোকে দেখতে সাধারণ মনে হলেও এর নাম ‘জ্যানথেলাজমা পালপেব্রারাম’। স্ট্যাটপার্লস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, এগুলো আসলে ত্বকের নিচে জমে থাকা কোলেস্টেরলের ছোট ছোট স্তর। যদিও এগুলো নিজে থেকে বিপজ্জনক নয়, তবে আপনার শরীরে উচ্চ কোলেস্টেরল থাকার একটি বড় লক্ষণ হতে পারে। সবার উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে এমন দানা দেখা যাবে, তা নয়। দেখা গেলে আপনার কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো উচিত।
অস্বাভাবিক ক্লান্তি
ক্লান্তি আমাদের সবারই কম-বেশি হয়। কিন্তু ভালো ঘুমের পরেও যদি একটানা ক্লান্ত থাকেন, তাহলে এটি শুধু মানসিক চাপ বা ব্যস্ততার কারণে না-ও হতে পারে। অস্বাভাবিক ও দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি উচ্চ কোলেস্টেরলের একটি লক্ষণ হতে পারে। যখন ধমনিতে কোলেস্টেরল জমে, তখন তা সংকীর্ণ হয়ে যায়, ফলে রক্ত চলাচল কঠিন হয়। ফলে হৃৎপিণ্ডকে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এতে আপনি অস্বাভাবিকভাবে ক্লান্ত বা অলস অনুভব করতে পারেন। জার্নাল অব সাইকোসোম্যাটিক রিসার্চের গবেষণা অনুযায়ী, যদি আপনি প্রতিদিন ক্লান্তি বোধ করেন, তাহলে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত।
হাঁটতে গিয়ে বুকে হালকা চাপ অনুভব
যদি আপনি দ্রুত হাঁটা বা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় বুকে চাপ, আঁটসাঁট ভাব বা হালকা অস্বস্তি অনুভব করেন, তাহলে এটিকে উপেক্ষা করবেন না। এই অনুভূতিকে ‘অ্যাঞ্জাইনা’ বলা হয়, যা প্রাথমিক সতর্কবার্তা হতে পারে। এর মানে হলো, আপনার হৃৎপিণ্ড যথেষ্ট অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পাচ্ছে না। আর এই সংকীর্ণতার একটি প্রধান কারণ হলো উচ্চমাত্রার এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল।
ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড
ব্লাড ইনস্টিটিউট বলেছে, অ্যাঞ্জাইনা হলো হৃৎপিণ্ডের একটি সতর্কবার্তা যে এটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপের মধ্যে কাজ করছে। তাই এর সামান্য অস্বস্তি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
এই অস্বস্তিকে একটি সম্ভাব্য বিপৎসংকেত হিসেবে চিহ্নিত করলে আপনি হার্ট অ্যাটাকের মতো কোনো গুরুতর ঘটনা ঘটার আগেই পদক্ষেপ নিতে পারবেন। যদি এই লক্ষণগুলো আপনার কাছে পরিচিত মনে হয়, বিশেষ করে আপনার পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস থেকে থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন এবং আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নিন।
সূত্র: হেলথশট