হোম > স্বাস্থ্য

রোজায় পেটের সমস্যা এড়াতে যা করবেন

পুষ্টিবিদ মো. ইকবাল হোসেন 

সারা দিন রোজা শেষে ইফতারিতে আমাদের খাওয়ার আয়োজন থাকে বেশি। ইফতারের একটা বড় অংশ থাকে তেলে ভাজা খাবার। যেমন—পেঁয়াজু, বেগুনি, বিভিন্ন রকমের চপ, জিলাপি, বুন্দিয়া, চিকেন ফ্রাইসহ অনেক কিছু। দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনায় প্রতিদিনের ইফতারে এমন ডুবো তেলে ভাজা খাবার খেয়ে অনেকেই বিভিন্ন রকমের পেটের অসুখে আক্রান্ত হন। এ সময় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, আলসার, ফ্যাটি লিভার, ভালো গাট ব্যাকটেরিয়া কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, আনাল ফিসারসহ অনেক জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কারণ 
ইফতারের ডুবো তেলে ভাজাপোড়া ও মিষ্টিজাতীয় খাবার এসব সমস্যার জন্য মূলত দায়ী। এগুলো খেতে হয়তো অনেক মজাদার, কিন্তু মোটেও স্বাস্থ্যবান্ধব নয়।

যেকোনো ভোজ্যতেল যদি দীর্ঘ সময় আগুনের তাপে থাকলে ফ্যাটি অ্যাসিড ট্রান্সফ্যাটে রূপান্তর হতে থাকে। এই ট্রান্সফ্যাটই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এই ট্রান্সফ্যাট আমাদের পরিপাকতন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমিয়ে দেয়। ফলে খাবার হজম ও পুষ্টির শোষণ প্রক্রিয়া খুব ধীরে হয়। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে বুক জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। শরীর থেকে বারবার বায়ু নির্গমনের ফলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে মল শক্ত হয়ে পাইলস ও ফিসারের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। 

শরীরের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি হচ্ছে লিভার। একে শরীরের ব্যাংক বলা হয়। চাহিদার অতিরিক্ত খাবার খেলে তা লিভারে বিভিন্ন ধরনের চাপ তৈরি করে। এর মধ্যে অন্যতম ভাজাপোড়া খাবারের অতিরিক্ত ফ্যাট লিভারে জমা হতে থাকা। এ ছাড়া মিষ্টিজাতীয় খাবার ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খেলে সেগুলোও ফ্যাটে রূপান্তর হয়ে লিভারে জমা হয়। এই সমস্যাকে ফ্যাটি লিভার বলে। এর ফলে লিভার থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হওয়া ব্যাহত হয়। পিত্তরস খাদ্য পরিপাকের, বিশেষ করে স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাকের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। এর ফলে পরিপাকতন্ত্রে খাবারের হজম ও শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। 

করণীয়

  • খাবার বাছাইয়ে সতর্ক হতে হবে। চর্বিজাতীয় খাবার কমাতে হবে। এমন খাবার বাছাই করতে হবে যে খাবারে গুড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে।
  • ইফতারে ডুবো তেলে ভাজাপোড়া খাবার ও মিষ্টিজাতীয় খাবার বন্ধ করতে হবে। 
  • সরল কার্বোহাইড্রেট, যেমন—চিনি, গুড়, গ্লুকোজ এগুলো এবং এগুলো দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। 
  • ইফতারির খাবার দুই ভাগে ভাগ করে খেতে হবে। প্রথমে অল্প কিছু খেয়ে মাগরিবের নামাজ পড়বেন, নামাজ শেষে বাকিটা খাবেন।
  • সুপাচ্য পুষ্টিকর সুষম খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে হবে। শস্য, সেদ্ধ ছোলা, বাদাম, ডালজাতীয় খাবার খেতে হবে। তরকারিতে মিষ্টিকুমড়া, শসা, পটোল, পেঁপে, ঢ্যাঁড়স, লাউ, চালকুমড়া, লালশাক, লাউশাক এগুলো রাখতে হবে। 
  • খাবার দ্রুত না খেয়ে ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। 
  • প্রোবায়োটিকস সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন টক দই, টক দইয়ের লাচ্ছি, ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা ফলের রস পান করতে হবে। 
  • ইফতারের পরে ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস করা যেতে পারে। 
  • ধূমপান বা মদ্যপানের মতো অভ্যাস থাকলে তা অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

অস্বাস্থ্যকর ইফতারির ফলাফল হিসেবে প্রথমে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে অন্যান্য জটিল শারীরিক সমস্যাগুলো দেখা দেয়। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো খুব সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যায়। এসব বিষয়ে সম্ভব হলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, হাসপাতালে ভর্তি ২০০ জন

৬ দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা

টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতিতে দিনভর দুর্ভোগ

শৌচাগার সুবিধা: হাসপাতালে বিড়ম্বনায় প্রতিবন্ধীরা

ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৫৬৫

এইডস দিবসের আলোচনা: চলতি বছর দেশে সর্বোচ্চ এইডস রোগী শনাক্ত

ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬১০

ডেঙ্গু: এক দিনে মারা গেল আরও ৫ জন, নভেম্বরে সর্বোচ্চ মৃত্যু

গলা ও বুক জ্বালাপোড়া সমস্যা: কেন হয় এবং প্রতিরোধে করণীয়

শীতে ত্বকের যত্ন ও চর্মরোগ থেকে পরিত্রাণের উপায়