এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় ৪০ বছরের। কিশোর চলে যাওয়ায় আমার যেন অঙ্গহানি হয়েছে। ইত্যাদি মানেই ছিল এন্ড্রু কিশোরের গান। তার বাসা ছিল আমার অফিসের পাশে। আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিতাম। সে শুধু আমার বন্ধু নয়, আমার সব কাজের সহযোগী। নিঃসন্দেহে এন্ড্রু কিশোর অনেক বড়মাপের একজন শিল্পী। অথচ এ নিয়ে কখনোই তার অহংকার ছিল না। ছোট-বড় সবার সঙ্গেই তার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো।
‘ইত্যাদি’তে গান শুরুর আগের কথা। প্রায়ই আমরা একসঙ্গে খেতে যেতাম রেস্টুরেন্টে। আমাকে দেখে লোকজন সালাম দিত, কেউ অটোগ্রাফ নিত, কেউ করমর্দন করত। কিশোরের দিকে কেউ খেয়ালই করত না। আমি ইতস্তত বোধ করতাম। মনে মনে ভাবতাম, এই ভক্তরা যদি জানত আমার পাশে যে লোকটি বসে আছে, সে হচ্ছে দেশসেরা সংগীতশিল্পী। কিন্তু কিশোরের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তাকে বোঝাতাম, ‘ভক্তরা তোকে দেখতে চায়। তাদের বঞ্চিত করা ঠিক না।’ আমার পীড়াপীড়িতেই একসময় বলল, যদি টিভিতে গাই, তোর অনুষ্ঠানেই গাইব।’
তার সঙ্গে স্মৃতি বলে শেষ করা যাবে না। গান করতে গেলে চিন্তা করি কাকে দিয়ে গাওয়াব। কিশোর ছিল আমার নিশ্চিত ভরসা। সে গাইলে সব সময়ই শতভাগ পারফেক্ট। এখনো হাজারো ব্যস্ততার মাঝে যখন একা হই, ভীষণ মিস করি তাকে।
হানিফ সংকেত আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রিয় বন্ধু এন্ড্রু কিশোরকে স্মরণ করেছেন।
দেখতে দেখতে একটি বছর হয়ে গেল কিশোর নেই। বিশ্বাস করতে মন চায় না, অথচ এটাই সত্যি। এন্ড্রু কিশোর বাংলা গানের ঐশ্বর্য। যার খ্যাতির চেয়ে কণ্ঠের দ্যুতি ছিল বেশি। যার কাছে গানই ছিল জীবন-মরণ, গানই ছিল প্রাণ। এই গানের জন্যই কিশোর পেয়েছে প্লেব্যাক সম্রাটের উপাধি। গানের জন্যই মানুষ তাকে ভালোবাসত। অবশেষে মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে গত বছরের এই দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেয় সবার প্রিয় এন্ড্রু কিশোর।
কিশোর তার গানের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বন্ধু, যেখানে থাকো, ভালো থেকো। শান্তিতে থেকো।