অভিনেতা মনোজ প্রামাণিক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করেন। অনেক দিন ধরেই তিনি চাইছিলেন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন কিছু কাজ করতে যাতে তাদের হাতে–কলমে শেখানো যায়। মনোজের সেই ইচ্ছা পূরণ হলো এবার। ঈদুল আজহায় ১৪ জন শিক্ষার্থী নির্মাণ করলেন ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা-আইয়ের প্রযোজনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে প্রোডাকশন হাউস ‘মনপাচিত্র’। শাহরিয়ার শাকিলের প্রযোজনায় এই কর্মযজ্ঞের ক্রিয়েটিভ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেছেন মনপাচিত্রের প্রযোজক অভিনেতা মনোজ প্রামাণিক। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘সাত দুগুণে চৌদ্দ’। এই ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ঈদের দিন থেকে প্রতিদিন দুটি করে রাত ১১টা ৩০ ও রাত ১১টা ৫০ মিনিটে দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বায়োস্কোপেও মুক্তি পাবে চলচ্চিত্রগুলো।
ছাত্রদের ওপর বিশ্বাস
অভিনেতা মনোজ প্রামাণিক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছেন অনেক দিন হলো। সেই হিসেবে এই শিক্ষার্থীরা তাঁর পূর্বপরিচিত। মনোজ বলেছেন, ‘বুঝতাম যে কার মধ্যে কী সম্ভাবনা আছে। কাকে দিয়ে কী হতে পারে। তাদের মধ্যে যারা আগ্রহী ছিল, যারা সাহস করেছে নির্মাণের, তাদের নিয়েই কাজ করেছি।’
প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল চাইছিলেন নতুন কজন নির্মাতাকে পরিচয় করিয়ে দিতে। যারা কাজ করতে চায় কিন্তু এখনো সুযোগের অভাবে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। মনোজও চাইছিলেন তাঁর শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি মূলধারার দু-একটা কাজ করুক, যেন তারা হাতে-কলমে শিখতে পারে। দুজনের ভাবনার যোগফলেই হয়ে ওঠে এই প্রজেক্ট।
প্রায় ছয় মাস যাবৎ হয়েছে এই কর্মযজ্ঞ। মনোজ বলেন, ‘প্রথমে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জানাই যে একটা প্রজেক্ট হচ্ছে, যারা এখানে কাজ করতে আগ্রহী, তারা গল্প জমা দাও। ২০টির মতো গল্প পাই আমরা। যে গল্পগুলো পেয়েছি, তার মধ্য থেকে বাছাই করে আটটা গল্প নির্বাচন করি। প্রথমে ভেবেছিলাম সাত দিনে সাতটা হবে। তারপর দেখা গেল আরও দুয়েকজন গল্প জমা দিল। ব্যাপারটা বাড়তে বাড়তে ১২টা হয়ে গেল। এভাবে একসময় ১৪টা গল্প নিয়ে প্রজেক্ট তৈরি হলো। পরে আরও বাছবিচার করতে করতে দুটি গল্প বাদ পড়ল। শেষ পর্যন্ত নির্মাতাদের ১২টি গল্প আর একজন অভিনয়শিল্পীর গল্পসহ বাইরের দুটো গল্প নিয়ে মোট ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পরিকল্পনা সাজানো হলো।’
ঈদের সাত দিন বলে একটা ব্যাপার আছে। প্রতিদিন দুটি করে চলচ্চিত্র প্রচারিত হচ্ছে। সাত দিনে মোট ১৪ জন নির্মাতার ১৪টি চলচ্চিত্র প্রচারিত হবে। তাই প্রজেক্টটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘সাত দুগুণে চৌদ্দ’। যদিও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের আরও ছয়জন শিক্ষার্থী প্রজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ ছয় দায়িত্বে কাজ করেছেন। ১৪টি চলচ্চিত্র হলো ইকবাল হাসান খানের ‘আনোয়ারা মনোয়ারা’, শ্রী অভীক চন্দ্র তালুকদারের ‘দেজাভ্যু’, সিজু শাহরিয়ারের ‘জুজু’, জি ডি মজুমদারের ‘সহজ সুন্দর’, এ বি মামুনের ‘নওমহল’, ইশতিয়াক জিহাদের ‘বিড়াল তপস্যা’, মানব মিত্রের ‘ভূগোল+’, হাসিব আহমেদের ‘মধুচক্র’, গোলাম মুনতাকিমের ‘কাউয়া’, রাহিল রহমানের ‘গ্যাঁড়াকল’, হুমায়রা স্নিগ্ধার ‘শুক্রবার’, শফিকুল সজীবের ‘ঝিলিক’, আহসাবুল ইয়ামিন রিয়াদের ‘জসুয়া সূর্যসেন জর্ডান বাসকে’, মুনসিফ উজ জামান মিমের ‘সেমিডেট’।
কাস্টিং থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়েই সরাসরি তত্ত্বাবধান করেছেন প্রযোজক শাকিল ও নির্বাহী প্রযোজক মনোজ। এই যেমন ঈদের ছুটিতেও মনোজ ব্যস্ত আছেন সাউন্ড ও মিউজিক নিয়ে। কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে নির্মাতারাই ঠিক করেছেন কোন চরিত্রে কে অভিনয় করবেন। পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ আর সমন্বয়টা করিয়ে দিয়েছেন প্রযোজকেরা। মনোজ জানিয়েছেন, কাজ শেষে অভিনয়শিল্পীরা খুবই প্রশংসা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রি-প্রডাকশন ছিল বেশ ভালো। নির্মাতারা আগে থেকেই পরিষ্কার হয়ে নিয়েছেন তাঁরা কী করবেন, কীভাবে করবেন। কাজের প্রতিও তাঁদের নিষ্ঠা আর সততা সবাইকে মুগ্ধ করেছে। সব মিলিয়ে মনে হয়েছে আমার পরিশ্রমটাও সার্থক হয়েছে।’
মনোজ জানালেন, ‘খুবই ভালো রেসপন্স। অনেকগুলো কন্ডিশনের মধ্য থেকে একটা টেলিভিশনের প্রডাকশন করতে হয়। এর মধ্যে লকডাউন ছিল। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছিল। তবু কারও চেষ্টার কমতি ছিল না। যাঁরা অভিনয় করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বলেছেন, “মনে হয়নি নতুনদের কাজ। ওদের চিন্তাধারা। বোঝানোর ক্ষমতায় মনে হয়েছে ম্যাচিউরড কারও সঙ্গেই কাজ করছি।” তাঁদের এই মন্তব্য আমাদের উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে বাহুগুণ।’ তিনটি প্রজেক্টে অভিনয় করেছেন মনোজ। এর একটিতে ছিলেন অতিথি চরিত্রে।
যাত্রাটা শুরু হলো। এবার নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন এই একঝাঁক নির্মাত—এমন প্রত্যাশাই জানালেন প্রযোজকেরা। ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে আগ্রহী তাঁরা।