আসামের কিংবদন্তি গায়ক জুবিন গার্গের মৃত্যু কোনো ‘দুর্ঘটনা’ নয়, বরং এটাকে ‘সরাসরি খুন’ বলা যায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। আজ মঙ্গলবার আসাম বিধানসভায় জুবিন গার্গের মৃত্যুর বিষয়ে বিরোধীদের আনা স্থগিতাদেশ প্রস্তাবের আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
ভারতের সাংস্কৃতিক উৎসব নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে (এনইআইএফ) অংশ নিতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন জুবিন গার্গ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে ৫২ বছর বয়সে মারা যান এই জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী-সুরকার।
হিমন্ত শর্মা বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের পর আসাম পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে এটা কোনো অপ আসাম পুলিশ নিশ্চিত হয় যে এটি কোনো ‘গাফিলতির কারণে মৃত্যু’ নয়, এটি সোজাসাপটা খুন।”
শর্মা আরও দাবি করেন, ‘অভিযুক্তদের একজন গার্গকে হত্যা করেছে, আর অন্যরা তাকে সহযোগিতা করেছে। এই হত্যা মামলায় চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হচ্ছে।’
গার্গের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ৬০টিরও বেশি মামলা করা হয়েছে। সরকার ঘটনাটি তদন্তে আসাম পুলিশের অপরাধ তদন্ত দপ্তরের অধীনে একটি বিশেষ তদন্ত দল এসআইটি গঠন করে। এ ছাড়া গৌহাটি হাইকোর্টের বর্তমান বিচারপতি সৌমিত্র সাইকার নেতৃত্বে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনও গঠন করা হয়।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভালের আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত, গায়কের ব্যবস্থাপক সিদ্ধার্থ শর্মা, ব্যান্ডের দুই সদস্য শেখর জ্যোতি গোস্বামী ও অমৃত প্রভা মহন্ত এবং গার্গের চাচাতো ভাই আসাম পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সন্দীপন গার্গকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গার্গের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী নন্দেশ্বর বরা ও প্রবীন বৈশ্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে তাদের ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ১০ লাখ রুপির বেশি আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার পর এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার সাতজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয় যার মধ্যে রয়েছে— খুন, খুন বলে গণ্য নয় এমন হত্যা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানো।
হিমন্ত শর্মা বলেন, ‘বিশেষ তদন্ত দল এমন অভেদ্য চার্জশিট দাখিল করবে এবং ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য রাজ্যের মানুষকে বিস্মিত করবে।’
তিনি আরও জানান, ডিসেম্বরে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর তদন্তের পরিধি বাড়ানো হবে যাতে অবহেলা, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ এবং অন্যান্য দিকগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
গতকাল সোমবার কমিশন বিবৃতি রেকর্ড ও প্রমাণ জমা দেওয়ার সময়সীমা ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। কমিশন গত ৩ নভেম্বর থেকে ওই ঘটনার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিবৃতি গ্রহণ এবং প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করে। এর আগের নির্ধারিত শেষ সময় ছিল ২১ নভেম্বর।
অন্যদিকে সিঙ্গাপুর পুলিশ বাহিনীও গার্গের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করছে।
এর আগে জুবিন গার্গকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ব্যান্ড সদস্য এবং মূল সাক্ষী শেখর জ্যোতি গোস্বামী। রিমান্ড নোটে জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং ইভেন্ট ম্যানেজার শ্যামকানু মহন্তের বিরুদ্ধে এই হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন গোস্বামী।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, গোস্বামী দাবি করেছেন, জুবিন গার্গের মৃত্যু একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। হত্যাকে দুর্ঘটনা বলে চালানোর জন্যই সিঙ্গাপুরের একটি নিরিবিলি স্থান, বিশেষ করে প্যান প্যাসিফিক হোটেলকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।