শনিবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একদল তরুণ আরেক তরুণকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। পরে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল এবং জসীমুদ্দিন হল থেকে ওই তরুণের বন্ধুবান্ধব ছুটে আসেন। ঘটনাস্থলে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়। এর মধ্যে মারধরকারী তরুণেরা সটকে পড়ে।
ঘটনার খোঁজখবর নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ক্যাম্পাসভিত্তিক উগ্র এক গ্রুপের সন্ধান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী আজকের পত্রিকা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র এলাকায় সব সময় ঘোরাঘুরি এমন একটি গ্রুপ নানা অপরাধে জড়িত থাকে। গ্রুপটিকে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কেমন সেই গ্রুপ? কারাই বা সদস্য? সে ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। তাঁদের মাধ্যমেই জানা গেল, গ্রুপে সক্রিয় যে কর্মীরা শনিবার রাতে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের সঙ্গে জড়িত তাঁদের পরিচয়। অবশ্য এখন তাঁরা কেউই ফোনকল ধরছেন না, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় নেই।
রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কবি জসীমউদ্দিন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও বিজয় একাত্তর হলের মিলনস্থলে (হল চত্বর) মারধরের শিকার অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন ২০২০-২১ সেশনের স্যার এ.এফ রহমান হলে থাকেন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নেওয়া হয়েছে।
মারধরকারী ওই তরুণদের মধ্যে জিয়া হলের তবারক, মুহসীন হলের অর্ণব ও টুরিজম হসপিটালাটি ম্যানেজমেন্টের সিফরাত সাহিলকে চিনতে পেরেছেন জুবায়ের।
এই ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ২০২০-২১ সেশনের একদল শিক্ষার্থী একটি গ্রুপ বানিয়েছেন, নাম দিয়েছেন ‘প্রলয়’। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্বরের পাশে তাঁদের নিয়মিত আড্ডা ও মাদক সেবনের স্থান। তাঁরা সে জায়গার নাম দিয়েছেন ‘নিকুম্ভিলা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলার একটি কক্ষ তাঁদের আড্ডার স্থান (কার্যালয়)। ক্যাম্পাসে দল বেঁধে চলাফেরা করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘবদ্ধ আড্ডা, গল্প ও ঘোরাঘুরির ছবি পোস্ট করেন নিয়মিত।
এই গ্রুপের একসময় সক্রিয় সদস্য ছিলেন তারেক ( ছদ্মনাম)। তিনিও ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। প্রথম বর্ষের শুরু থেকে হলে থাকেন, হলে ওঠার পর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, রাতে ঘুরতেন, কখনো কখনো গাড়ি আটকিয়ে হাতিরঝিল যেতেন দল বেঁধে, কখনো ধানমন্ডি লেকে, কখনো পুরান ঢাকার রেস্তোরাঁয়।
এভাবেই ‘প্রলয়’ গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তারেক। একসময় তাঁরা জড়িয়ে পড়েন মাদক, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সঙ্গে।
পরে অবশ্য অনেকেই পরিবারের কথা ভেবে, পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের স্বার্থে, কারও আবার গ্রুপের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক সদস্য জানান, প্রত্যেক হল থেকে বাছাই করে শিক্ষার্থীদের নেওয়া হয়। শর্ত থাকে— মারামরি করতে হবে, নেশা করতে হবে, বিভিন্ন সময় ঐক্যবদ্ধ থেকে ক্যাম্পাসে বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরির করার মানসিকতা থাকতে হবে।
নাজমুল হোসাইন, তৌসিফ তাহমিদ অর্পণ ও মাহিন মুনাওয়ার ছাত্রলীগের হল শাখার পদে রয়েছেন। নাজমুল ও তৌসিফ মাস্টারদা সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। আর মাহিন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সদস্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি যথোপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে সাংগাঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রলীগ অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ভূমিকা রাখবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী আজকের পত্রিকা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল এলাকায় সবসময় থেকে অপরাধে জড়ায় এমন একটি গ্রুপকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। আজ (শনিবার) যে ঘটনা ঘটছে সেটা হল প্রশাসনকে দেখতে বলা হয়েছে, তাঁরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।’
আরও খবর পড়ুন: