কুশিয়ারা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে।
এর আগে শনিবার দুপুরের পর থেকে বৃষ্টিপাত থামায় সিলেটের সুরমা, ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল কুশিয়ারা নদী। ভারতের আসামের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় গত দুই দিন পানি বেড়েই চলছিল। কুশিয়ারার ডাইকের বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় ভাঙন। ভাঙন ও ডাইক উপচে পানি ঢুকে জেলার ছয়টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিল। উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও গোলাপগঞ্জ।
জানা গেছে, প্রথম দিকে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল ধীরগতিতে। কিন্তু গত রোববার থেকে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়। সোমবার কুশিয়ারা তীরবর্তী উপজেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এক মাসের পূর্বের বন্যার সময় যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল, তার পাশাপাশি নতুন নতুন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ডাইকের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। ফলে কুশিয়ারা তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। কুশিয়ারা তীরবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার ৩৯টি স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে সুলতানপুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর, সদর ইউনিয়নের রারাই, বীরশ্রীর সুপ্রাকান্দি, কাজলসারের বড়বন্দ এলাকায়। বর্তমানে উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে আরও ভাঙনের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
বালাগঞ্জ উপজেলার অবস্থাও একই। কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে এবং ওপর দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট। বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে বালাগঞ্জ-খছরুপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা সদরের সঙ্গে এখনো বিয়ানীবাজার উপজেলার সড়কযোগাযোগ ঠিকে থাকলেও যেকোনো সময় তা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। পানি বাড়ার পাশাপাশি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার চারখাই, আলীনগর, শেওলা, দুবাগ, কুড়ারবাজার ও থানা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ওসমানীনগর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতিও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। উপজেলার গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর, বুরঙ্গা, সাদিপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, উসমানপুর ও উমরপুর ইউনিয়নের পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সময়ে সময়ে বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুরমা তীরবর্তী বাঘাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকায় অবনতি হয়েছে। উপজেলার শরীফগঞ্জ, বাদেপাশা, ঢাকা দক্ষিণ, আমুড়া ও ভাদেশ্বর ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুশিয়ারার তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার, সেখানে পানি ১১ দশমিক ২১ সেন্টিমিটার; কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার, সেখানে পানি ১৩ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার; সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমা ৭ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার, সেখানে ৮ দশমিক ০৭ সেন্টিমিটার পানি রয়েছে।
কমছে কুশিয়ারা নদীর পানিও। কুশিয়ারার অমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, সেখানে পানি ১৭ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার; ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার, সেখানে পানি ১০ দশমিক ৫৩ সেন্টিমিটার; শেওলা পয়েন্টের বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার, সেখানে পানি ১৩ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার। শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে। সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। একই অবস্থা সিলেট নগরীরও। তবে কিছু জায়গা থেকে পানি দু-এক হাত নেমে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত সুরমা নদীর সব পয়েন্টে ও কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ দুই জেলাতেই পানি কমতে শুরু করেছে। কুশিয়ারার পানি গত দুই দিন বাড়লেও আজ থেকে সেটাও কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো সুরমা নদীর সব পয়েন্ট ও কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই জেলার নদ-নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হলে আশা করা যায় পানি আর বাড়বে না।