অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হতে চলেছে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে জব্দ হওয়া কয়েক হাজার নৌকা ও ট্রলার। এসব নৌযান রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে একদিকে যেমন কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে নৌযানের মালিকেরা। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, আইনি জটিলতায় মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না নৌযান।
বন বিভাগের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, এ স্টেশনে অযত্ন আর অবহেলায় শত শত নৌকা ও ট্রলার পড়ে আছে। শুধু বুড়িগোয়ালিনী নয়, কদমতলা, কৈখালীসহ সব জায়গার একই চিত্র। বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বনে ঢোকার দায়ে বন বিভাগের অভিযানে জব্দ হওয়া তিন হাজারের বেশি ছোট-বড় নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে ব্যবহার-উপযোগিতা নষ্ট হচ্ছে।
জেলে-বাওয়ালিরা অধিকাংশ সময় সুন্দরবনে যেতে নৌকা ভাড়া নেন। এসব নৌযানমালিকদের দাবি, পড়ে থাকা হাজার-হাজার নৌকা ও ট্রলার ছেড়ে দেওয়া হোক। এ বিষয়ে নৌযানের মালিক আবু রায়হান বলেন, ‘যে নৌকাগুলো ধরে বন বিভাগ, সেগুলো দ্রুত হস্তান্তর করলে আমরা উপকৃত হতাম। ৬-৭ বছর পরে সেগুলো দিলে বা নিলামে তুললে তার আর কোনো কার্যকারিতা থাকে না।’
শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ গ্রামের আসলাম শেখ জানান, যারা অবৈধভাবে জঙ্গলে যায়, তাদের নৌকা ধরে ফেলে। তারা হয়তো পালিয়ে কয়েক দিন পর বাড়ি ফেরে, কিন্তু নৌকাগুলো কেসে পড়ে। নৌকাগুলো ছাড়ে না। এভাবে চললে গরিব মানুষ বাঁচবে না। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে যাওয়ার উপযোগী একটি নৌকার দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। মাঝারি সাইজের একটি নৌকার মূল্যমান ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। আর ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলারের দাম ১০ লাখের বেশি। ফেলে রাখার কারণে এসব সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।
তবে নৌযানগুলোর ভাগ্য আদালতের হাতে বলে মন্তব্য করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, ‘সুন্দরবনের মধ্যে যারা অপরাধ করে, তাদের আমরা নৌকাসহ আটক করি। পরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আর নৌকাগুলো জব্দ তালিকায় দেখানো হয়। কিন্তু নৌকা ছেড়ে দেওয়া তো আদালতের বিষয়। এগুলো কি নিলাম হবে, নাকি তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হবে বা বাজেয়াপ্ত হবে, সবই আদালতের বিষয়। আমরা শুধু ব্যবস্থাপনা করে থাকি।’