হোম > সারা দেশ > রংপুর

‘কেংকা করি এখন সংসার চালাম আর জমির টাকা শোধ করিম’

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

‘আশা ছিল কয়দিন পরে কপি তুলি হাটোত বেচাম। কিন্তু ভাগ্য এতই খারাপ যে, বানের পানি সব নষ্ট করি দিল। কপির জমিত পানি ঢুকি ডুবি সব পচি নষ্ট হয়া গেল। গরিবের ওপর যত গজব! এই ক্ষতি না হলে প্রায় দেড় লাখ টাকার কপি বেচানু হয়। এখন কী করমো? কেংকা করি সংসার চালাম আর কেংকা করি জমির টাকা শোধ করিম।’ 

চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন এজারুল ইসলাম (৪২)। এজারুল দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের গঙ্গপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি দিনমজুর। তাঁর নিজের বলতে আছে পাঁচ শতক জমিতে একটি টিনের বাড়ি। অন্যের জমিতে কাজ আর জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেই চলে তাঁর সংসার।

আগাম জাতের শীতের সবজি ফুলকপি বাজারে তুলে বেশি দামে বিক্রি করবেন এমন আশায় বাড়ির পাশে এক বছরের জন্য ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ২৫ শতক জমি বর্গা নেন এজারুল। সেখানে ফুলকপির ছয় হাজার চারা লাগান। তাতে জমি তৈরি, চারা রোপণ, পরিচর্যাসহ খরচ হয় ৩৫ হাজার টাকা। গাছগুলোতে ফুল আসতে শুরু করেছিল। কদিন বাদেই কপি বাজারজাত করার আশা ছিল তাঁর। সেই কপি বিক্রি করতে পারতেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। কিন্তু উজানের ঢলে নদীর পানি জমিতে ঢুকে সেই সবজি খেত নষ্ট হয়ে গেছে তাঁর।

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে উপজেলার প্রায় সাড়ে চার শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলের মাঠ তলিয়ে যায়। তাতে শিবনগর ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদ, বুজরুক পাঠকপাড়া, লক্ষ্মণপুর, পাঠক পাড়াসহ বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, করলা, লাউ, শিমসহ আগাম জাতের বিভিন্ন শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়ে যায়। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বের হতে শুরু করে সেই ক্ষত।

উপজেলার শিবনগর ইউনিয়ন দিয়ে ছোট যমুনা ও তিলাই নদী প্রবাহিত হওয়ায় নদী এলাকায় ব্যাপক পলি জমে, যা সবজি চাষের উপযোগী। তাই এই এলাকার মানুষ ধানের পাশাপাশি নিয়মিত সবজি চাষ করে এবং আগাম সবজি চাষেও তারা বেশি আগ্রহী।

আজ বুধবার সরেজমিন গেলে জানা যায়, শিবনগর ইউনিয়নের বুজরুক পাঠকপাড়া গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম ৫০ শতক; পাঠকপাড়া গ্রামের রহিদুল ইসলাম ১৭ শতক জমিতে কপি, ৮ শতক জমিতে শিম, ১০ শতক জমিতে লাউ; লক্ষণপুর গ্রামের মান্নান ৬০ শতক; অনুকূল ৯০ শতক; প্রকাশ ৬০ শতক; মান্নান ৬০ শতক; একই এলাকার মঞ্জুরুল ৭২ শতক; নুরুজ্জামান ৬০ শতক; দুলাল ৫০ শতক; পরিতোষ ৫০ শতক ও বকুল ৫০ শতক জমিতে কপি চাষ করেন। যা ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে নদীর পানিতে জমি প্লাবিত হয়ে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকেরা বলেন, এ ধরনের ক্ষতি হলেও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে খোঁজখবরও নেওয়া হয়নি।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সবজি চাষের সময়। কিন্তু বেশি লাভের আশায় উপজেলার কৃষকেরা আগাম জাতের বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। উপজেলায় চলতি বছর রবি শস্য আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে কপি ৭৩৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ফুলকপি ৩৬০ হেক্টর এবং বাঁধাকপি ৩৭৫ হেক্টর।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজানের পানিতে উপজেলার ৬৮ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তবে পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। আমন ধানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে এ পর্যন্ত জলাবদ্ধতায় দুই হেক্টর জমির সবজি খেত নষ্ট হয়েছে।

পঞ্চগড়ে চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত

ফুলবাড়ীতে ট্রলির চাপায় সহযোগী নিহত

কাউনিয়ায় কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টা, যুবক গ্রেপ্তার

বিশেষ ট্রেনের দাবিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের রেলপথ অবরোধ, ছেড়ে যায়নি লালমনি এক্সপ্রেস

কাউনিয়ায় মহাসড়কে ঝরল দুই কৃষকের প্রাণ

রংপুর-৩ আসনে জি এম কাদেরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

খামার থেকে গরু লুট, আন্তজেলা ডাকাত চক্রের চার সদস্য গ্রেপ্তার

গুলিবিদ্ধ হাদির মৃত্যু: গঙ্গাচড়ায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল

ওসমান হাদিকে গুলি মানে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা: আল মামুন

গাইবান্ধায় গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে থেকে ৪ ককটেল উদ্ধার