'ও বাবা গো, ও মা গো। আমার অসিমকে মেরেই ফেলল গো। দালাল ওবাইদুল আমার ছেলের লাশও দিচ্ছে না গো। গলা কাটা ভিসায় বিদেশ নিয়ে আমার ছেলেকে খাইলো গো! ' দালালের ফাঁদে পরে বিদেশ যাওয়া ১৬ বছরের কিশোর অসিমের মায়ের এমন আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে বগুড়ার শিবগঞ্জের মুখোরজান গ্রাম। অভিযোগ উঠেছে, গলাকাটা ভিসায় বিদেশে নেওয়ার পর বৈধ কাগজ পত্র চাওয়ায় অমানুষিক নির্যাতন করে অসিমকে হত্যা করেছেন দালাল ওবাইদুল।
গরিব বাবা জসিম উদ্দিনের অভাবের সংসারে সুখ আনতে পার্শ্ববর্তী মিল্কিপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ওবাইদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে অসিম ও তার বাবা–মা। ভালো বেতনে বৈধ প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাড়ে তিন লাখ টাকা নেন ওবাইদুল। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি বুক ভরা আশা নিয়ে পারি জমান মালয়েশিয়ায়। কিন্তু অসিম বুঝতে পারেনি এই ভিসায় অন্যের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে মালয়েশিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে তাকে। মুহূর্তেই ভেঙে যায় তার স্বপ্ন। বাড়িতে বাবা মাকে ফোনে জানায়, অন্যের পাসপোর্ট ভিসায় তাঁর ছবি লাগিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ওবাইদুল তাঁকে বিদেশে এনেছেন।
এ দিকে অসিমের পরিবার ওবায়দুলকে কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়ার কথা বললে তিনি আরও ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা নেওয়ার দীর্ঘ ১৮ মাস পেড়িয়ে গেলেও কাগজপত্র ঠিক না করে উল্টো একের পর এক হয়রানি করেন অসিমকে। পরে কাগজপত্র নেওয়ার জন্য শেষমেশ দালাল ওবায়দুলের মেসে যায় অসিম। মারা যাওয়ার একদিন আগে অসিম মা রেশমাকে জানায় ওবায়দুলের সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছে তার।
নিহতের মা রেশমা জানান, গত ১৮ মে সকালে ছেলে অসিমের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। পরে দুপুরের দিকে ফোন করে জানানো হয় তাঁর সন্তান গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাঁর অভিযোগ, কাগজ চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে তাঁর সন্তানকে হত্যা করেছে ওবাইদুল।
আদরের সন্তানের মরদেহ না পেয়ে শোকাহত বাবা মা মূর্ছা যাচ্ছেন মাঝে মাঝেই। শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ সাবু বলেন, 'আমি লাশ দেশে আনার জন্য অসিমের পরিবারকে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি।'
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম সম্পা আজকের পত্রিকাকে বলেন, দূতাবাস থেকে আমাদের কাছে কোন তথ্য জানতে চাওয়া হয়নি। নিহতের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা মরদেহ দেশে আনার জন্য আবেদন করলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।