রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৮ মে কারাগারে যান রায়হান আলী। ছিলেন ৪ জুন পর্যন্ত। অথচ এই সময়ের মধ্যে তাঁর নামে খাসপুকুর ইজারা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি যাচাই-বাছাই ছাড়াই আবেদন মঞ্জুরও করেছে। তাঁর নামে ইজারা দেওয়া হয়েছে ৯ বিঘার দুটি পুকুর।
পুকুর ইজারা পাওয়া রায়হান আলী রাজশাহী জেলা যুবলীগের সহসম্পাদক। তাঁর বাবা গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস। অয়েজ উদ্দিন গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র ছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি পলাতক। তাঁর ছেলেকে সরকারি পুকুর ইজারা দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
রায়হানের মামলা ও পুকুর ইজারাসংক্রান্ত নথিপত্রে দেখা গেছে, গোদাগাড়ী থানা পোড়ানোর মামলায় গত ৮ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন যুবলীগ নেতা রায়হান আলী। এ সময় আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। এরপর ১৯ মে গোদাগাড়ী উপজেলার সরকারি খাসপুকুর ইজারা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
কারাগারে যাওয়া রায়হান আলী প্রকৃত মৎস্যচাষি না হয়েও আওয়ামী আমলে প্রভাব খাটিয়ে আশার আলো মৎস্যচাষি লিমিটেড নামের একটি সমবায় সমিতির নিবন্ধন নেন। হয়ে যান সমিতির সভাপতিও। তিনি জেলে যাওয়ার পর পুকুর ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে এ সমিতির নামে তিনটি পুকুর ইজারা নিতে আবেদন জমা দেওয়া হয়। আবেদনে স্বাক্ষরও ছিল রায়হান আলীর।
২৭ অক্টোবর উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি রায়হানের আশার আলো সমিতির নামে দুটি পুকুর ইজারা দেয়। সমিতিটি মোহনপুর ইউনিয়নের ৫৬ নম্বর কোচারপাড়া মৌজার ১ নম্বর খাসখতিয়ানভুক্ত ২৪৯ নম্বর দাগের ১ দশমিক ৫৮ একরের একটি পুকুর এবং ৬৭ নম্বর আইহাই মৌজার ৫০০ নম্বর দাগের দেড় একরের আরেকটি পুকুর ইজারা পায়। আশার আলো ৭৯ নম্বর মিরপুর মৌজার ২৭২ নম্বর দাগের শূন্য দশমিক ৯৯ একরের আরেকটি পুকুর ইজারা চেয়েছিল। এ পুকুর ইজারা দেওয়া হয়েছে সারাংপুর মধ্যপাড়া মৎস্যচাষি সমিতির নামে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একটি সমিতিকে দুটির বেশি পুকুর ইজারা দেওয়া যায় না। তাই মিরপুরের পুকুরটি সারাংপুর মধ্যপাড়া সমিতির নামে দেওয়া হয়েছে। পুকুর তিনটি পেয়েছে একই চক্র। সারাংপুর মধ্যপাড়া সমিতিরও সভাপতি যুবলীগ নেতা রায়হান আলীর বড় ভাই তাইনুস আলী। তিনিও প্রকৃত মৎস্যচাষি নন। তিনি গোদাগাড়ী সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক।
এদিকে যুবলীগ নেতা রায়হান আলী ২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার এবং উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদ্য যোগদান করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুস সাদাত রত্নকে লিখিতভাবে জানান, তিনি পুকুর ইজারা গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁর স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। ইজারা বাতিলের আবেদনও জানান তিনি।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই তিন পুকুর হাতিয়ে নিয়েছে পৌর এলাকার সারেংপুর মহল্লার মাহফুজ বারীর সিন্ডিকেট। মাহফুজ বারীও প্রকৃত মৎস্যচাষি নন। পেশায় তিনি কাপড় ব্যবসায়ী।
যোগাযোগ করা হলে জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়টি আংশিক স্বীকার করে মাহফুজুল বারী বলেন, ‘আমি জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত কি না, সে বিষয়ে কিছু বলব না। ব্যস্ত আছি। পরে এ বিষয়ে আপনাকে ফোন দিয়ে জানাব।’ পরে আর ফোন দেননি তিনি।
ইউএনও ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নাজমুস সাদাত রত্ন বলেন, ‘এ ঘটনা আগের ইউএনওর সময়ের। এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজ নিতে হবে।’